টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গোটা প্যানেল। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জন খুইয়েছেন চাকরি। কিন্তু সেই আদলতের নির্দেশই এই বাতিল প্যানেল থেকে চাকরি বহাল রয়েছে বীরভূমের ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষিকা সোমা দাসের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্বেও এসএস সি-র নবম-দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থী হিসাবে কলকাতায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আন্দোলনে শামিল ছিলেন। সোমার চাকরি বহাল থাকলেও বাতিল হয়েছে বাঁকুড়া ছাতনা ব্লকের ঘোড়ামুলী গ্রামের বাসিন্দা বিধান বাউড়ির। বিধানবাবুও দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত।
সোমা দাসের মতোই জীবনে প্রতিকূলতার সাতকাহন বিধানবাবুর। শুধুমাত্র নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, বিধানবাবু লড়ছেন ক্যানসারের সঙ্গে। দেশের রাজধানীতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভুয়ো চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতারণার বিরুদ্ধেও লড়ছেন। আর্থিক সংকটে জর্জরিত বাউড়ি সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত বাঁকুড়ার (Bankura) ঘোড়ামুলী গ্রামের এই বাসিন্দা বিধান বাউড়ি শৈশব থেকেই অদম্য মনোবলের জোরে লড়াই চালিয়ে লেখাপড়ার পাঠ শেষ করেছেন। প্রশিক্ষণ না থাকায় ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পাশ করার পরেও চাকরি পাননি তিনি। তবে ২০১৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি-র ((SSC Group C) পরীক্ষায় বসে পাশ করেন তিনি। ২০১৮ সালে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। অভাবের সংসারে বিধানবাবু সরকারি চাকরি পাওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছিল তাঁর পরিবারে। ছেলের সরকারি চাকরি পাওয়ার পর মুখে হাসি ফুটেছিল তাঁর বাবা পাড়ু বাউড়ি ও মা সনকা বাউড়ির।
[আরও পডু়ন: বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে পুলিশের পিস্তল, সন্দেশখালিতে তল্লাশি চালিয়ে আর কী পেল CBI?]
বিধানবাবুর সেই সুখ অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। আচমকাই একদিন স্কুলে কাজ করার সময় হাতে কাঁপুনি অনুভব করেন তিনি। সেই ব্যামো বাড়তে শুরু করে। চিকিৎসা শুরু করতেই ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে বিধানবাবুর। তা অস্ত্রোপচার করার পর ক্যানসারের (Cancer) জীবাণু বাসা বাঁধে তাঁর শরীরে। সেই চিকিৎসা করাতে দিল্লিতে (Delhi) গিয়ে ভুয়ো চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন তিনি। তার পর এই মারণ ব্যাধির চিকিৎসা করাতে গিয়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন-সহ একাধিক ব্যাঙ্কে ঋণ করেছেন তিনি।
[আরও পডু়ন: ছবি তুলতে হোটেলের মধ্যে ঢুকে এল পাপারাজ্জি, রেগে লাল জুনিয়ার এনটিআর, ভাইরাল ভিডিও]
সোমবার আদালতের রায়ে চাকরি খুইয়েছেন ঝুজকা হাইস্কুলের অশিক্ষক কর্মী বিধান বাউড়ি। তাঁর দাবি, কোনও শর্টকাট নয়, টানা পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্নীতির বলি হতে হল তাঁকে। মা সনকা বাউড়ির কথায়, ''তিন মেয়ে এক ছেলে আমার। লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। টানা ছ বছর চাকরি করার পর পরিবারের একমাত্র চাকুরে আমার ছেলে চাকরি হারানোয় চোখে অন্ধকার দেখছি।'' ছেলের চিকিৎসা কীভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে তা নিয়েই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছে তাঁর। বিধান বলছেন, ''রুগ্ন শরীর। লড়াইয়ের শক্তি জোগাই কিভাবে? সবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ আদালতের ২৮২ পাতার রায়ে এক লহমায় সব ওলটপালট হয়ে গেল। পরক্ষণেই তাঁর প্রশ্ন, ''আদালত মানবিকতার কারণে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহাল রাখছে, আমারটা কেন নয়?''