অর্ণব আইচ: কুন্তলের তরফে সোমা চক্রবর্তীকে দেওয়া ‘ঋণে’র বিপুল টাকা ফের পাঠানো হয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। এভাবেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির (SSC Scam) প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিউটাউনের ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তীর মাধ্যমে অন্য জায়গায় পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। ওই টাকা কোনও প্রভাবশালীর অ্যাকাউন্টে পাচার হয়েছে কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করছেন ইডি আধিকারিকরা।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের উঠে এসেছে এক সুন্দরীর নাম। সোমা চক্রবর্তী (Soma Chakrabarty) নামে ওই যুবতীকে শুক্রবারই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে হাজিরা দিতে বলে ইডি। গত ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সোমা চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা গিয়েছে বলে অভিযোগ ইডির (ED)। প্রাথমিক জেরার পর সোমা ইডি আধিকারিকদের জানান, কুন্তল তাঁকে ঋণ হিসাবে কয়েক দফায় এই টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। শুক্রবার সোমা তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পত্তির তথ্য ইডি আধিকারিকদের কাছে পেশ করেন। শনিবার সোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটেই চাঞ্চল্যকর তথ্য ইডির কাছে আসে।
[আরও পড়ুন: জামিন কৌস্তভ বাগচির, আদালতে খারিজ পুলিশের আরজি]
দেখা যায়, সোমার অ্যাকাউন্টগুলিতে দফায় দফায় টাকা ঢুকেছে। অথচ যত টাকা ঢুকেছে, দিনকয়েক পর প্রায় তত টাকাই দুই বা তার বেশি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, এভাবেই ঋণ দেওয়ার নামে সোমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে কুন্তল (Kuntal Ghosh) কালো টাকা সাদা করেছেন। এবার সেই টাকা ফের কুন্তল সোমার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠকে পাঠিয়ে পাচার করেছেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। এবার যাঁদের নামে ওই অ্যাকাউন্টগুলি, তাঁদের তলব করে ইডি জেরা করবে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নিউটাউনের একটি নামী শপিং মলে কয়েকটি নেল আর্ট পার্লার রয়েছে। তার মধ্যে একটি সোমার। নখের সৌন্দর্য্য বাড়াতে বহু মহিলা ওই পার্লারগুলিতে আসেন। ফলে পার্লারগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছেই। তাই পার্লারের অবস্থা আরও ভাল ও ব্যবসা বাড়ানোর জন্যই কুন্তলের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে সোমা দাবি করেন। যদিও গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, কুন্তল ঘোষের কাছ থেকেই তিনি ঋণ নিতে গেলেন কেন? তাঁর সঙ্গে কীভাবে কুন্তলের পরিচয় হয়? কুন্তলই যে তাঁকে ঋণ দিয়ে আর্থিক সাহায্য করতে পারবেন, বা কুন্তলের কাছে যে বিপুল টাকা রয়েছে, তা তিনি কীভাবে জানলেন? তিন বছর ধরে কি কুন্তলের সঙ্গে সোমার বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠতা ছিল? কারণ, তিন বছর ধরে ক্রমাগত কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে সোমা চক্রবর্তীর প্রায় কুড়িটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে। এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর সোমার কাছে ইডি আধিকারিকরা পাননি। তাই তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে।
[আরও পড়ুন: রক্ষাকবচ নয় হাই কোর্টেও, ফিট সার্টিফিকেট পেলে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে বাধা নেই ইডি’র]
এদিকে, ইডির গোয়েন্দারা দেখেছন যে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) বা সোমা চক্রবর্তী দু’জনই নেল আর্ট পার্লারের মালিক। অর্পিতার উত্তর শহরতলির বরানগর, দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক এলাকায় একাধিক নেল আর্ট পার্লার ছিল। আবার গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়েরও পার্লার ছিল বলে জানা গিয়েছে। ফলে পার্লারকে সামনে রেখেই টাকা পাচারের ছক কষা হয় কি না, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।