অর্ণব আইচ: ইডি’র চার্জশিট পেশের দিন ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে বেরনোর সময় মুখ খুললেন মানিক ভট্টাচার্য। দুর্নীতি মামলার সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে না জড়ানোর আরজি তাঁর। যদিও ইডি’র পেশ করা চার্জশিটে মানিকের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, স্ত্রী-সহ মোট ৬ জনের নাম রয়েছে। এরপর লক আপের দিকে চলে যান মানিক ভট্টাচার্য। শুনানির পর ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মানিক ভট্টাচার্যকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালতে মানিক ভট্টাচার্যর আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত তাঁর জামিনের আবেদন করে জানান, ইডির কমপ্লেইন্ট বা চার্জশিটে উল্লেখ করা আছে যে, এখনও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। যদি তদন্ত শেষ না-ই হয়, তবে চার্জশিট পেশ করা হল কীভাবে? একে চার্জশিট বলা চলে না। মানিক ভট্টাচার্যকে শাসকদলের নেতা ও প্রভাবশালী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। শাসকদল নিয়ে ইডি’র এত অ্যালার্জি কীসের? কতজনের উপর তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন? ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি, ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ ভদ্র আবেদনে জানান, মূল চার্জশিটটি ১৫৯ পাতার। মোট ৫ হাজার ২৪৭ পাতার নথি পেশ করা হয়েছে। ৬০ জন সাক্ষী বয়ান দিয়েছেন। এই মামলার তদন্তে ৬১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যেগুলির মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। মানিক ও তাঁর পরিবার, পরিচিতদের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই টাকা ৩২টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিটের মাধ্যমে লগ্নি করা হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ‘পুষ্করে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যেত’, মুখ্যমন্ত্রীকে বেনজির আক্রমণ ‘নাস্তিক’ বিমান বসুর]
মানিক ভট্টাচার্য তাঁর সহযোগী তাপস মণ্ডলের মাধ্যমে বেসরকারি বিএড, ডিএলএড কলেজের কাছ থেকে টাকা তুলে উপরমহলে পাঠাতেন। কলেজ কর্তৃপক্ষর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে তোলা ২ কোটি ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৮ টাকা মানিকপুত্র শৌভিকের সংস্থা অ্যাকিউয়ের ও ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫০ টাকা এডুক্লাসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। বিএড কলেজের সংগঠনের নেতা বারাসতের তাপস মণ্ডলের মাধ্যমে ৩২৫ জন টেট চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে প্রথম দফায় মোট ৩ কোটি ২৫ লাখ ও পরের দফায় ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা তোলা হয়।
এর মধ্যে পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে চাকরিও পান। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ইডি ১৯টি কলেজের কর্তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইডি’র আইনজীবীদের দাবি, যে টাকা মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে, তা কোনওমতেই তাঁদের নয়। কিন্তু সেই টাকা কোথা থেকে এসেছে, সেই সম্পর্কে মুখ খোলেননি মানিক বা তাঁর পরিবারের কেউ। চার্জশিটে উল্লেখ করা আছে যে, মূল চক্রী মানিক ভট্টাচার্যই স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে অনেকের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলানোর ব্যবস্থা করেন। এমনকী, মৃত আত্মীয় মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার পর কেওয়াইসি-ও আপডেট করা হয়। মানিক তাঁর তিন ভাই, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়, এমনকী, বন্ধুদেরও যেভাবে দুর্নীতির টাকা সরাতে ‘ব্যবহার’ করেছেন, সেই তথ্যও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি।