অর্ণব আইচ: তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) এজেন্ট রাজ্যের এক বিধায়ক? ওই বিধায়কের সাহায্যেই কি ২৪ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছেন দুই ধৃত? নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এই প্রশ্নই তুলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের খবর, ওই বিধায়কের ব্যাপারে খোঁজখবরও নিচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডির দাবি, বিভিন্ন জেলার ৬৯ এজেন্টের সাহায্যেই ‘কেল্লাফতে’ করে তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষ। এই এজেন্টদের ২৩ জন গোপাল দলপতির বলেই ইডির অভিযোগ।
ইডির তদন্তে উঠে এসেছে যে, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল তুলেছেন অন্তত ৩৪ কোটি টাকা। ওই টাকার মধ্যে অন্তত ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে গোপাল দলপতিকে। বেআইনিভাবে এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক এবং টেট-এর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন জেলা, এমনকী কলকাতায় নিয়োগ করা হয়েছিল অজস্র এজেন্ট। এরকম এজেন্টের দু’টি তালিকা ইডির গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তার মধ্যে একটি তালিকায় রয়েছেন ৪৬ জন। অন্য তালিকায় এজেন্টের সংখ্যা ২৩। কুন্তল ঘোষের নিউ টাউনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি রেজিস্টার খাতার সন্ধান পায় ইডি। ওই খাতার প্রত্যেকটি পাতায় রয়েছে একজন করে এজেন্টের নাম ও তাঁরা যাঁদের কাছ থেকে যত টাকা তুলেছেন, তাঁদের বিস্তারিত বিবরণ। ইডির জেরায় কুন্তল জানান, ওই খাতাটি তাপস মণ্ডলের। ওই খাতা থেকেই ৪৬ জন এজেন্টের নাম পাওয়া যায়।
[আরও পড়ুন: সাড়ে তিন বছরেই ঠোঁটস্থ সব রাজ্যের রাজধানী, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে নাম তুলল বালুরঘাটের খুদে]
দেখা গিয়েছে, কেউ দু’জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছেন। আবার কেউ বা টাকা তুলেছেন দু’জনের কাছ থেকে। কেউ বা ১৪ বা ১৮ জনের কাছ থেকে। উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে মেদিনীপুরে, বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলা হয়। তবে আদালতে পেশ হওয়া ইডির চার্জশিট অনুযায়ী, তাপস-কুন্তলের খাতায় থাকা ওই তালিকায় ৫৪ নম্বর পাতায় এসে চোখ আটকে যায় গোয়েন্দাদের। এখানে রয়েছে এমন এক এজেন্টের নাম, যাঁর পাশে ইংরেজি হরফে লেখা ‘এমএলএ এমএসডি’। প্রাথমিকভাবে তা দেখে ওই ব্যক্তি মুর্শিদাবাদের কোনও বিধায়ক, এমন সম্ভাবনা ইডি উড়িয়ে দিচ্ছে না। কারণ, ওই নামে মুর্শিদাবাদ জেলার এক বিধানসভার বিধায়ক রয়েছেন বলে জেনেছে ইডি। ফলে ওই বিধায়ক এজেন্ট হিসাবে ২৪ জনের কাছ থেকে টাকা তোলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি। সেই ক্ষেত্রে কীভাবে ওই বিধায়কের সঙ্গে তাপস মণ্ডল বা কুন্তলের যোগাযোগ হল, তা নিয়েও চলছে তদন্ত। ওই তালিকায় ৫২ পাতায় যাঁর নাম রয়েছে, তিনি ২১২ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন। ১৭ পাতার এজেন্ট তুলেছেন ১৫৮ জন, ২০ ও ৬৯ পাতার এজেন্ট তুলেছেন ৫৮ জন, ৬৪ পাতার এজেন্ট তুলেছেন ৪১ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে। আবার গোপাল দলপতির যে এজেন্টরা ৩২৩ জনের কাছ থেকে বিপুল টাকা তুলেছিলেন, সেই ২৩ জনের নামের তালিকাও পেয়েছে ইডি। যদিও গোপালের তালিকায় সবথেকে বড় এজেন্ট হিসাবে দেখানো হয়েছে তাপস মণ্ডলকে, যিনি ৯৮ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন।
জেরার সময় কুন্তল ঘোষের সামনে বেশ কিছু নথি তুলে ধরা হয়, যাতে রয়েছে প্রাথমিক ‘সংগঠক’ শিক্ষকদের তালিকা। ওই শিক্ষকদের প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করার জন্য হাই কোর্টে আবেদন করা হচ্ছে বলে ওই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। ওই তালিকায় মোট ১৬টি জেলার ৩৬৪ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ১৫৩ জন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলা হয়। এ ছাড়াও তালিকায় উত্তর ২৪ পরগনার ৪৯ জন, হাওড়ার ৪২ জন, মুর্শিদাবাদের ৩৬ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩২ জনের নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি।