স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আজ, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হবে। আর সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে চাকরিপ্রার্থী সকলেই। শীর্ষ আদালতে আজ মামলা করা হবে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের তরফেও। কিন্তু তার আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার, এসএসসি ও পর্ষদের অবস্থান দেখে নিতে চান তাঁরা। তাই এদিনের শুনানির দিকে তাঁদের বিশেষ নজর থাকবে। দেশের শীর্ষ আদালতে শুনানির দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন অনেকেই। সকলেই চাইছেন, হাই কোর্টের রায়ে ‘স্থগিতাদেশ’ দিক শীর্ষ আদালত।
গত সোমবার, ২১ তারিখ হাই কোর্টের (Calcutta HC) নির্দেশের পরদিনই শহিদ মিনারে জমায়েত করেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা। তৈরি হয় ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। সেই মঞ্চের তরফে ইতিমধ্যেই ৬ জন প্রতিনিধি দিল্লি (Delhi) গিয়েছেন। প্রতিনিধি দলের মেহবুব মণ্ডল বলেন, “আমরা আলাদা করে SLP দায়ের করছি যোগ্য শিক্ষকদের তরফে। সোমবার কেস নম্বর পেয়ে যাব। যদি রাজ্য সরকারের মামলায় স্থগিতাদেশ (Stay order) হয়ে যায়, তাহলে আমরা লড়াই করার জন্য আরেকটু সময় পেয়ে যাব। যদি স্থগিতাদেশ নাও হয়, তাহলেও আমরা যারা সমস্ত রকম বেনিয়মের বাইরে আছি, তাঁরা আলাদাভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাব। আমরা প্রত্যেক প্রার্থীর নথি দেখে নিয়েছি, যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে।” শুধু স্থগিতাদেশ নয়। চাকরিহারা যোগ্যদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘ক্লিনচিট’ পাওয়া। সুপ্রিম কোর্টের কাছে রাজ্য সরকারের মামলায় যদি কোনওদিক তুলে না ধরা হয়, সেই দিকটি নিজেদের মামলায় উপস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে চাকরিহারাদের। তাই আজকের শুনানিতে বিশেষ নজর থাকবে তাঁদের। আজও শহিদ মিনারে জমায়েত করবেন চাকরিহারা শিক্ষকরা।
[আরও পড়ুন: বঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কি শুভেন্দু? সোজাসাপ্টা জবাব দিলীপ ঘোষের]
আসানসোলের (Asansol) বাসিন্দা স্মার্তি রায়। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে যোগ দিয়েছিলেন নৈহাটি নরেন্দ্র বিদ্যায়তনে। কিন্তু সেই চাকরি বাতিল হয়েছে। স্মার্তিদেবীর কথায়, “আমরা মনেপ্রাণে চাইছি, আপাতত স্থগিতাদেশ হোক। তাহলে আমরা অন্তত আমাদের লড়াইটা শুরু করতে পারব। কিছু মানুষ মানসিক শান্তি পাবেন। অনেক বন্ধু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্থগিতাদেশ হলে তাঁরা এখনকার জন্য অন্তত মানসিক শান্তি পাবেন। কারণ, হাই কোর্টের রায়ে প্যানেল বাতিল মানে আমাদের চাকরিটা কিন্তু নেই। যত কষ্ট হোক সেটাই সত্যি। এই মাসের বেতনটা হয়তো পাব। কিন্তু, স্থগিতাদেশ না পড়লে সেটা কতদিন চলবে, সেই ভয় তো আমাদের আছে।” হাই কোর্টের নির্দেশে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অশোকনগরের স্বর্ণালি চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতির এজলাসে মামলাটি উঠছে। আশা করি, উনি আমাদের অবস্থা বুঝবেন যে আমরা কী পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।”