সোহিনী সেন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মাস্টারপিস ‘দেবী চৌধুরাণী’ বলতেই মনে পড়ে যায় সুচিত্রা সেনের মুখ। সোনার গয়নায় সজ্জিতা সুন্দরীর হারমোনিয়াম বাজিয়ে ‘ওগো এসো হে আমার…’-ই হোক বা প্রফুল্লর চাউনির ইস্পাতসম দার্ঢ্য- ১৯৭৪-এ দীনেন গুপ্তর ছবিতে সুচিত্রা যে মাইলফলক তৈরি করে যান, তা ছুঁতে পারেননি অন্য কোনও বাঙালি পরিচালক বা নায়িকা। ৪৪ বছর পর আবারও পর্দায় বঙ্কিম-কলমের সেই বৈপ্লবিক আস্ফালন। তবে এবার ছোটপর্দায়। ‘স্টার জলসায়’ শুরু হতে চলেছে ‘দেবী চৌধুরাণী’। প্রফুল্লর দেবী চৌধুরাণী হয়ে ওঠার অবস্মরণীয় সফরকে কুর্নিশ জানিয়েই চ্যানেলের এই উদ্যোগ।
অমিত সেনগুপ্ত পরিচালিত এই ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন নবাগতা সোনা সাহা। মালদার সোনা এখন থাকেন গল্ফ গ্রিনে। জানালেন, প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজেকে পর্দায় দেখার। নাচ আর মডেলিংয়ের সঙ্গে চলত অডিশনও। অডিশন দিতে দিতেই পেয়ে গেলেন ‘বিগ ব্রেক’। ঐতিহাসিক সাহিত্যভিত্তিক চরিত্র। স্বভাবতই আর পাঁচটা চরিত্রের থেকে আলাদা। তাই প্রথম প্রথম ভয় পেতেন সোনা। অকপটেই স্বীকার করে ফেললেন তা। তারপর বিবিধ ওয়ার্কশপ আর গ্রুমিং চরিত্রটার সঙ্গে ধাতস্থ হতে সাহায্য করেছে। তার সঙ্গে চলেছে বারবার উপন্যাসের মূল টেক্সট পাঠ। এছাড়াও ছিল সিনিয়র অভিনেতাদের আশ্বাসবাণী। প্রফুল্ল থেকে দেবী চৌধুরাণীর রূপান্তরের যাত্রাটাই উপন্যাস এবং ধারাবাহিকের অন্যতম উপজীব্য। সেই দুর্দমনীয় মানসিক ও শারীরিক ট্রানজিশনটাকে দর্শকের কাছে ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়। তাকে বাস্তবসম্মত করে তোলা কঠিনতর।
[অনুরাগের নির্দেশেই বারবার নগ্ন হতে হয়েছে, বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর]
সোনা জানালেন, পুরোদস্তুর দেবী চৌধুরাণী হয়ে উঠতে তাঁকে লাঠি-তলোয়ার চালানো ও ঘোড়ায় চড়া শিখতে হয়েছে। এখনও শিখছেন। এডুকেশন-এ বিএ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী সোনা। পড়াশোনা সামলে মেগার লিডিং রোল সামলাতে অসুবিধা হয় বইকি! তবে দেবী চৌধুরাণী বলে কথা, এইটুকু তিনি উতরে দেন পারদর্শিতার সঙ্গেই- জানাতে গিয়ে আত্মবিশ্বাস ধরা পড়ে নবাগতার কণ্ঠে। প্রশ্নপর্বে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে সুচিত্রা সেন অনুষঙ্গ।
‘সুচিত্রা সেন যে-চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন, তার গুরুদায়িত্ব এখন আপনার কাঁধে। ইতিমধ্যেই তুলনা-সমালোচনার গুনগুন শুরু হয়ে গিয়েছে। এরকম একটা হেভি ওয়েট নামের সঙ্গে কম্পেয়ারড হওয়াটাকে কীভাবে নিচ্ছেন?’
‘চরিত্র নিয়ে তুলনা তো টানা হবেই। সুচিত্রা সেন অত বড়, অত অসাধারণ অভিনেত্রী! আমার অভিনয় কেউ ভাল বলবেন, কেউ খারাপ। আমি তো আর মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারি না। যেটা পারি সেটা হল, এই তুলনাজনিত আমার নিজের নার্ভাসনেসটাকে কাটিয়ে উঠে দর্শককে নতুন প্রফুল্ল আর দেবী চৌধুরাণী উপহার দিতে। আর ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে মানুষ যেহেতু ডিটেলিং আশা করেন, তাই তাঁদের কাছে পৌঁছনোর স্কোপটাও আমার বেশি। আমার লক্ষ্য, সেটুকুকে পজিটিভলি কাজে লাগানো।’ সোনা আশাবাদী, উপন্যাসের পাতার মতোই ধারাবাহিকের প্রফুল্লও দর্শকের মন জয় করবে। প্রতিবাদ ও সাহসিকতার নিশান ওড়াবে। ধারাবাহিকে প্রফুল্লর স্বামীর চরিত্রে নতুন মুখ রাহুল মজুমদার। শ্বশুরের চরিত্রে দেখা যাবে সুজন মুখোপাধ্যায়কে। ১৬ জুলাই থেকে সোম থেকে রবি সপ্তাহে সাতদিন রাত আটটা থেকে সম্প্রচারিত হবে ‘দেবী চৌধুরাণী’।
[বাঙালি অভিনেতারা বাংলাও বলতে পারেন না, বিস্ফোরক সৌমিত্র]
The post সুচিত্রা সেনের তুলনা তো আসবেই, জেনেই ‘দেবী চৌধুরাণী’ সোনা সাহা appeared first on Sangbad Pratidin.