সুব্রত বিশ্বাস: চলতি মাসের শুরুতে ময়নাগুড়ির দোমহনিতে ঘটেছে ভয়ংকর দুর্ঘটনা। বিকানের এক্সপ্রেস (Bikaner Express) লাইনচ্যুত হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বহু যাত্রীর। কীভাবে ঘটল ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এবার প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রকাশ্যে এসেছে একটি অডিও ক্লিপ, যাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে চালককে আগেই সতর্ক করেছিলেন স্টেশন মাস্টার। যদিও অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন।
আলিপুরদুয়ার দোমহনির কাছে বিকানের এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর তদন্তের স্বার্থে একাধিক তথ্য সংগ্রহ করেছে রেল। যার মধ্যে রয়েছে কন্ট্রোল ও ইঞ্জিনের ব্ল্যাক বক্স। এই বক্স থেকে একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সেখানে শোনা যাচ্ছে, এক স্টেশন মাস্টার বলছেন, বিকানের এক্সপ্রেস থেকে স্পার্ক দেখা গেল। চালক প্রতিবার্তায় বলছেন, “ব্রেক কষায় এটা হচ্ছে।” তারপরই ঘটে ট্রেন দুর্ঘটনা। স্টেশন মাস্টারের কথার পর ট্রেন দাঁড় করালে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো বলে দাবি তদন্তকারীদের। স্টেশন মাস্টার চালক ও অন্য কর্মীদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়ায় নিজের চোখে দেখা স্পার্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেননি।
[আরও পড়ুন: পুরভোটের প্রচারের মাঝে অগ্নিমিত্রার কাছে গায়ে তৃণমূলের পতাকা বাঁধা সারমেয়! তারপর…]
ট্রাকসন মোটর ঝোলার ফলে এই স্পার্ক হচ্ছিল, এটা দুর্ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে। ঘটনার দিন স্টেশন মাস্টার নিজের দেখা বিষয়টি জোরের সঙ্গে বলতে পারেননি। কারণ, একেবারে নিশ্চিত না হয়ে ট্রেন দাঁড় করালে পরবর্তীতে সাসপেন্ড করা হতে পারে। ফলে আশঙ্কা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নির্দেশ দিতে পারেননি। ট্রেন যাওয়ার সময় স্টেশন মাস্টার, গেটম্যান ও বড় স্টেশনে রোলিং ইন ও রোলিং আউট কর্মীরা ট্রেনের গতিবিধি লক্ষ্য করেন। ট্রেনে স্পার্ক হচ্ছে কি না, ট্রেন থেকে কিছু ঝুলছে কি না, কতটা গতি, ভারসাম্য ঠিক আছে কি না ইত্যাদি দেখে তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁদের নির্দেশ বিশেষ গুরুত্ব পায় না। পাশাপাশি ওঁরা নিজেদের মত দিতে সাহস পান না, পাছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোপে পড়তে হয়। এই দ্বৈরথের কারণেই এবারের দুর্ঘটনা।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিল রেল। এবার আশঙ্কাজনক কোনও কিছু ধরতে পারলে কর্মীদের পুরস্কৃত করতে হবে। রেল বোর্ডের পিইডি (সেফটি) দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু কড়া নির্দেশ দিয়েছে। যেখানে জিএম অন্তত একটা সেকশনের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন। হেড কোয়াটার্স ও ডিভিশনের আধিকারিকরা লাইন খতিয়ে দেখবেন, মেরামতি যাতে স্থায়ীভাবে থাকে তা খতিয়ে দেখবে। গাফিলতি হলেই কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের বিভাগীয় সুরক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখে, গাফিলতি থাকলেই ব্যবস্থা নেবেন। রেলবোর্ডের এই নির্দেশ একেবারে অভিনব ও বাস্তবিক বলে মনে করেছেন রেল আধিকারিকরা। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যা উপযুক্ত পদক্ষেপ বলে তাদের ধারণা।
শুনে নিন অডিও ক্লিপটি: