সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলম লিখছেন কেকেআর অধিনায়ক৷ গৌতম গম্ভীর মনে করেন ইডেনে আজকের ম্যাচে পাহাড় টপকাতে হবে তাঁর বোলারদের৷
আমার মনে হয়, এবারের আইপিএলে আমরা নিজেদের যা ক্ষমতা তার পুরোটা দেখাতে পারিনি৷ যেদিন আমরা ব্যাটিং ভাল করছি, আমাদের বোলিং খারাপ হচেছ৷ আর বেশিরভাগ দিনই ফিল্ডিং হচেছ গড়পরতার চেয়েও নিচু৷ যে ব্যাপারগুলোর দিক থেকে আর বেশি দিন আমরা মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি না৷ বিশেষ করে মারাত্মক টিমগুলোর বিরুদ্ধে৷ যেমন গুজরাত, যেমন বেঙ্গালুরু৷ পরের দলটার সঙ্গে তো আমরা আজই খেলছি৷ সাংঘাতিক দল৷ যে প্যাকটাকে বিরাট কোহলি লিড করে৷ আর বিস্ফোরক ত্রিমূর্তির অন্য দু’জন গেইল ও ডি’ভিলিয়ার্স৷ ইডেন গার্ডেন্সের সুন্দর ব্যাটিং পিচে আমাদের বোলারদের রবিবার পাহাড় টপকাতে হবে৷
[ফের স্বমহিমায় ধোনি, একার হাতে জেতালেন পুণেকে]
পাহাড়ের কথা ওঠায় শনিবার আমরা কী করেছি আপনাদের বলি৷ এদিন আমাদের প্র্যাকটিস ডে ছিল না৷ দিনের বেশিরভাগ সময়টাই স্পনসরের শুটিংয়ে কেটেছে আমাদের৷ জনপ্রিয় এক মোবাইল ফোনের ব্র্যান্ডের শুটিং৷ যেখানে আমরা ‘সেলফিস্তান’ দিলাম৷ কেকেআরের প্রত্যেক প্লেয়ারকে একটা করে সেলফি তুলতে হল, কোনও একটা জায়গার সঙ্গে, যে জায়গায় সে বেড়াতে যেতে চায়৷ জায়গাগুলোর লিস্টে আমরা একটা খুব পছন্দের নাম ছিল– মাউণ্ট এভারেস্ট৷ ট্রেণ্ট বোল্ট বাছল নাসা৷ পৃথিবীর বাইরের দুনিয়া নিয়ে ওর বিরাট আগ্রহটা আমার জানা বলে, আমি ওর সেলফি-নির্বাচন সম্পর্কে এতটুকু অবাক হইনি৷ টিমের বাকিদের মধ্যে কেউ বাছল সুনামি, কেউ আবার কোনও গুহা৷ কারণটা ওরাই বোধহয় সবচেয়ে ভাল জানে৷ উমেশ যাদব আগ্ণেয়গিরির সঙ্গে সেলফি তুলবে ঠিক করেছিল৷ উমেশের এখন মানসিক অবস্থাও ওরকম কি না আমি ঠিক জানি না৷ কিংবা আমার মতোই অবস্থা কি না! যে এখন আবেগের পাহাড় ছাপিয়ে স্রেফ নিজের সব সেরাটা দিতে চাইছে৷
[ছেলের সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছেন এবি ডিভিলিয়ার্স, দেখুন ভিডিও]
শুক্রবার গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটা আমার এক অন্যতম প্রিয় বন্ধু মুনাফ প্যাটেলের সঙ্গে আমাকে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছিল৷ মুনাফ এখন গুজরাত ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত৷ প্রায় তিন বছর পর ওর সঙ্গে দেখা হল৷ আর দেখলাম ‘মুন্না’র একটা হাড্ডিও পাল্টায়নি৷ এখনও ওর হাঁটাচলা গ্রাম্য বালকের মতো৷ মাথার কয়েকটা চুলে হয়তো পাক ধরেছে৷ নইলে ওর সেই কমেডিয়ানের মতো মজা করার অভ্যেস, জীবনের প্রতি সহজ-সরল দর্শন এখনও আগের মতোই৷ মুন্নাকে আমি সবসময় হিংসে করি৷ জগতের কোনও কিছুই ওকে দমাতে পারে না৷
মুন্না এখন একজন বাবা ছাড়াও একজন ক্রিকেটার, যে আবার উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে৷ বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগের দিন আমরা দু’জন একসঙ্গে লাঞ্চ করার সময় ওর ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা কী, জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ আমাকে ‘রাজে’ বলে ডাকে ও৷ যার বাংলা অর্থ একজন প্রিয় মানুষ৷ আমার প্রশ্নে মুন্না বলল, “রাজে, ভবিষ্যত্ নিয়ে কিছুই ভাবিনি৷ দেখ লেঙ্গে জো হোগা৷ যা হবে দেখা যাবে৷” হায়, আমি যদি ওর মতো ভাবতে পারতাম৷ গুজরাতের কাছে হারার পর হোটেলে আমার ঘরে যখন গোমড়া মুখে ঢুকলাম রাত প্রায় দেড়টা৷ অত রাতেও হোটেলের নোটপ্যাড আর পেন নিয়ে বিছানায় এসে বসলাম৷ আর ভাবতে লাগলাম, আরসিবি-র বিরুদ্ধে আমাদের টিমের কম্বিনেশন কী হওয়া উচিত৷ আর আশায় থাকলাম আমার ভেতর এক টুকরো মুনাফ প্যাটেলের জন্য৷
[মধুর প্রতিশোধ, রায়নার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পরাস্ত কেকেআর]
টিম কম্বিনেশন নিয়ে ভাবনা পনেরো মিনিট পরই উধাও হল, ক্লান্তি এসে সেই জায়গা পুরোপুরি দখল করায়৷ ঘরের আলো, টিভির সুইচ বন্ধ করতেও ভুলে গিয়েছিলাম৷ শুক্রবার আমাদের হারের পিছনে পরিষ্কার কারণ, খারাপ বোলিং৷ ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে জাক কালিস বলছিল, আমরা একবারও নিজেদের গেমপ্ল্যান কাজে লাগাইনি৷ বোলারদের কাছে যা চাওয়া হয়েছিল, বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও ওরা তা দিতে ব্যর্থ৷ কেউ কেউ বলতে পারেন, আমরা ১০-১৫ রান কম তুলেছি৷ কিন্তু আমি বরাবর বিশ্বাস করি, ম্যাচ জেতায় বোলাররা৷ সুরেশ রায়না যেরকম অসাধারণ ব্যাট করল, তাতে ২০০-ও খুব বড় টার্গেট হতো না ওদের কাছে৷
দীনেশ চোপড়া মিডিয়া
The post ‘এবারের আইপিএলে নিজেদের ক্ষমতার পুরোটা দেখাতে পারিনি’ appeared first on Sangbad Pratidin.