সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবাদ বলে, যে জায়গায় মৃত্যু হয়, মানুষ না কি সেখানকার মায়া কাটাতে পারে না! মৃত্যুর পরে অন্তত একবার হলেও সেখানে আসে নিজের শরীর খুঁজতে।
মৃত্যু-সংক্রান্ত প্রবাদ এও বলে, মায়া কাটাতে না পারলে অতৃপ্ত আত্মা থেকে যায় পৃথিবীতেই! তার মুক্তিলাভ হয় না!
পাটনার শিশুটির সঙ্গেও কি তাই হয়েছিল?
অনুরাগ তখন থাকত পাটনায়। কর্মসূত্রে তাদের পরিবার বাস করত শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। নিশ্চিন্ত ছিল জীবন, সুখেই দিন কাটত। সমস্যা দেখা দিল তখন, যখন অফিস থেকে অনুরাগের বাবার ফের বদলির নির্দেশ এল। এবারের গন্তব্য দিল্লি।
নির্দেশমতো শুরু হয়ে গেল গোছগাছের পালা! বাবা চেয়েছিলেন, অনুরাগ তাঁদের সঙ্গেই দিল্লি চলে আসুক! কিন্তু অনুরাগের সে বছর ফাইনাল পরীক্ষা, সে কিছুতেই একটা বছর নষ্ট করতে চায়নি।
এবং, তখন থেকেই শুরু হল অদ্ভুত ঘটনা! দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বয়সে যথেষ্টই বড়, নিজের খেয়ালও সে রাখতে পারে, তবু বাবা অনুরাগকে কিছুতেই বাড়িতে একা ছাড়তে রাজি নন।
পরে যুক্তি বুঝে অনুরাগকে রেখে যাওয়া হয় পাটনাতেই। ঠিক উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অভিজিতের দায়িত্বে। অভিজিৎ অবিবাহিত, পরিবার বলতে তাঁর কেবল আছে এক মন্টি নামের জার্মান শেফার্ড। দু’জনের সঙ্গেই অনুরাগের ভালই ভাব!
অতএব, মা-বাবা চলে গেলেও অনুরাগের খুব একটা অসুবিধা হত না। রাতে খাওয়ার পর সে চলে আসতে চাইত নিজেদের ফ্ল্যাটে। এবং, এখানেই তীব্র আপত্তি দেখা দিত অভিজিতের তরফে। তিনি কিছুতেই অনুরাগকে একা বাড়িতে রাত কাটাতে দেবেন না।
এভাবে দিন দু’য়েক তিনি নিজের ফ্ল্যাটে আটকেও রাখেন অনুরাগকে। পরে, পড়ার দোহাই দিয়ে অনুরাগ নিজের ফ্ল্যাটে রাত কাটাবার অনুমতি পায়। তবে, একা নয়! মন্টিকেও অনুরাগের ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন অভিজিৎ।
সেই রাতটা অনুরাগের পক্ষে সুখের হয়নি। মন্টি খালি চেঁচিয়েই চলেছিল ফ্ল্যাটে আসার কিছুক্ষণ পর থেকে। মাঝখানে সে থামলে অনুরাগ ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মন্টির চিৎকারে তার ঘুম ভেঙে যায়।
উঠে গিয়ে মন্টিকে থামানোর চেষ্টা করে অনুরাগ। মন্টি কিন্তু থামে না! ঘরের মধ্যে একটা বিশেষ দিকে তাকিয়ে সে চেঁচিয়েই যায়!
হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয় অনুরাগ। জল খেতে আসে রান্নাঘরে। ফ্রিজের দরজাটা খোলে। খুলেই চমকে ওঠে। ফ্রিজের আলোয় দেখতে পায়, অন্ধকার ঘরে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছোট্ট ছেলে। আপাদমস্তক তার কালো পোশাকে ঢাকা!
অনুরাগ বুঝতে পারছিল না, তার কী করা উচিত! ঠিক সেই সময়ে মন্টি ছুটে আসে রান্নাঘরে। আর, তাকে দেখেই ছেলেটা ছুটে যায় জানলার দিকে। লাফ দেয় বাইরে! দেখতে দেখতে তার শরীর মিলিয়ে যায় হাওয়ায়!
অনুরাগ আজও বুঝতে পারে না, কী ভাবে একটা ছেলে জানলার শিক দিয়ে বাইরে বেরোতে পারে! কী ভাবেই বা সে মিলিয়ে যেতে পারে হাওয়ায়!
শুধু এটুকু বুঝতে পারে, সে একাই ওই ছেলেটিকে দেখেনি। বাবা আর অভিজিৎও দেখেছিলেন! সেই জন্যই বাবা একা ফ্ল্যাটে থাকতে দিতে চাননি ছেলেকে! যদি কোনও ক্ষতি হয়!
আর ক্ষতির আশঙ্কাতেই অভিজিৎও অনুরাগের সঙ্গে সে রাতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মন্টিকে।
অভিজিৎ কি জানতেন, বিপদে একমাত্র মন্টিই বাঁচাতে পারবে অনুরাগকে? অভিজিৎ কি ওই ফ্ল্যাটের এমন কোনও বাচ্চা ছেলেকে চিনতেন, যে মন্টিকে ভয় পেত? মৃত্যুর পরেও যে ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে পারেনি?
প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া কঠিন! শুধু জানা যায়, আজও সেই বাচ্চা ছেলেটি রয়ে গিয়েছে ওই ফ্ল্যাটেই! তবে, কারও ক্ষতি সে করেছে বলে শোনা যায় না!
The post ফাঁকা ফ্ল্যাটে ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত এই শিশু! appeared first on Sangbad Pratidin.