ধীমান রায়, কাটোয়া: তিনি যাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু মানেন, সবাইকে সেই 'বন্ধু'রই খোঁজ দিতে চান। তাই তিনি রোজ খোলা আকাশের নীচে বসে থাকেন সেই বন্ধুদের নিয়ে। থুড়ি, একরাশ বই নিয়ে। তিনি নিরুপম রায় ঘটক। কেউ তাকে বলেন 'বইদাদা।' কেউ বলেন,'বইকাকা।' কচিকাঁচাদের কাছে আবার এখন তিনি'বইদাদু।' তিন প্রজন্ম দেখে আসছে একরাশ বই নিয়ে কাটোয়া (Katwa) আদালত চত্বরে একটা ত্রিপল বিছিয়ে বসে থাকেন তিনি।
কাটোয়ার পড়ুয়া থেকে প্রবীণ বইপ্রেমী, সকলের কাছেই তিনি পরিচিত মুখ। কম দামে পুরনো বই বিক্রি করেন। অনেকেই বলেন,যে বই শহরজুড়ে বইয়ের দোকানগুলিতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, সেই বইও নিরুপমবাবুর কাছে অনায়াসে মিলে যায়। বস্তুত পুরনো বইয়ের ভাণ্ডার নিয়েই বসে থাকেন নিরুপমবাবু। কম দামে তাঁর কাছে বই কিনতে আসেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন: ‘সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছেন’, নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েও সুপ্রিম ভর্ৎসনার মুখে রামদেব]
কাটোয়ার কলেজপাড়ায় পৈতৃক একটি পুরনো বাড়িতে থাকেন নিরুপমবাবু। স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে সংসার। অবিবাহিত দাদা অনুপমবাবু রোগশয্যায়। তাঁরও দায়িত্ব নিরুপমবাবুর কাঁধেই। অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই শেফালীদেবী স্বামীকে সহায়তার জন্য দুটি বাড়িতে রান্নার কাজ করেন।
নিরুপমবাবু বলেন," ২২ বছর আগে যখন এই ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখন মোটামুটি চলে যেত। বই বিক্রি ভালোই হত। এখন তো বাচ্চারা, তরুণ প্রজন্ম মোবাইলে আসক্ত। বই পড়তেই চায় না। বিক্রিও কমেছে।" তাহলে আপনি পেশা বদল করেননি কেন? নিরুপমবাবুর উত্তর,"আমি নিজেও বই পড়তে ভালবাসি। ছোট থেকেই আমার বই পড়ার নেশা। বই-ই আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু। তাই বই ছাড়তে পারিনি।"
[আরও পড়ুন: কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ইডির তৎপরতায় কংগ্রেসের ‘হাত’! বিস্ফোরক বিজয়ন]
কাটোয়া আদালত চত্বরের এক কোণে একটি ত্রিপল বিছিয়ে নানা ধরনের পুরনো বইয়ের সম্ভার সাজিয়ে বসে থাকেন নিরুপমবাবু। কী নেই? বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে নানা ধরনের উপন্যাস, ছোটদের রকমারি গল্পের বই । মূলত সব ধরনের বই-ই পাওয়া যায়। নিরুপমবাবুর কথায়,"খুব ভালো লাগে যখন বাচ্চারা এসে এখান থেকে পছন্দের বই তুলে নেয়। আমি চাই ছোটরা বই পড়ুক। পড়ার অভ্যাস ওদের ফিরে আসুক।"