সম্যক খান, মেদিনীপুর: র্যাগিংয়ের মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুরের (Medinipore) সরকারি স্কুলে। ঋষি রাজনারায়ণ মহিলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধু র্যাগিং নয়, ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ছুরিজাতীয় ধারালো বস্তু নিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগও উঠেছে সিনিয়র পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে শনিবার স্কুলে বিক্ষোভও দেখান অভিভাবকদের একাংশ।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন শিশুকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরাও। খবর পেয়ে আসেন মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খানও। তবে ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে কেউ চিহ্নিত না হওয়ায় কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, “আগামী বুধবার স্কুলে অভিভাবকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। যার যা অভিযোগ আছে তা শোনা হবে। তারপর তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ইতিমধ্যে ছাত্রীদের আচার আচরণের উপর নজর রাখতে স্কুলে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাখা হবে একজন বিশেষ নিরাপত্তারক্ষীও।
[আরও পড়ুন: কারা আসতেন অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে? তথ্য পেতে ইডির নজরে ভিজিটারস বুক]
জানা গিয়েছে, স্কুলে র্যাগিংয়ের মূল ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ছুরিজাতীয় কিছু দেখিয়ে ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। এদিন ওই ছাত্রীর বাবা-মা-সহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক এসে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা গোস্বামীর কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগ উঠেছে, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের দিয়ে উঁচু ক্লাসের ছাত্রীরা গা-হাত-পা টেপানো, জল আনানো, বাসন মাজানোর মতো কাজও করায়। বিভিন্ন সময় আবার নাচতেও বলা হয়। ‘নির্দেশ’ না মানলে নানারকম হুমকি দিত সিনিয়ররা বলেও অভিযোগ। আক্রান্ত ছাত্রীর মা মণি দাস বলেছেন, “আমার মেয়েকে ছাদের উপর নিয়ে গিয়ে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে সিনিয়র ছাত্রীরা। ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।” ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত ওই ছাত্রীরা। স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা গোস্বামী বলেছেন, “বিষয়টি জানতে পেরে আক্রান্তকে নিয়ে আমরা অভিযুক্ত ছাত্রীদের খোঁজে গিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পারেনি ছোট্ট মেয়েটি। সঠিকভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে ঘটনাটি অনভিপ্রেত। বিদ্যালয়ে এধরনের ঘটনা কখনও কাম্য নয়।” তিনি আরও বলেছেন, “গত দু’বছর করোনার কারণে স্কুল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল ছাত্রছাত্রীরা। মোবাইলের নেশা তাদের গ্রাস করে রেখেছে। ইতিমধ্যে একাধিক মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে রাখা আছে। ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করার কথা ভাবা হচ্ছে।” বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রতবাবু বলেছেন, “স্কুলে ১৭০০ ছাত্রী আছে। সকলের উপর নজর রাখা সম্ভব নয়। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরই সিসিটিভি বসানো-সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।”