নব্যেন্দু হাজরা: ‘স্যর যারা চোখে দেখতে পান তাঁদের জন্য তো রাস্তা পারাপারের জন্য সিগন্যাল রয়েছে। কিন্তু আমরা যারা দেখতে পাই না, তাদের পথনিরাপত্তা কোথায়? আমরা তো বুঝতেও পারি না, সিগন্যাল কখন লাল আর কখন সবুজ!’
বৃহস্পতিবার দুপুরে কসবা পরিবহণভবনে পথনিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মশালায় নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির এক ছাত্রের এই প্রশ্নে রীতিমতো বিব্রত হয়ে পড়েছিলেন পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। সত্যিই তো এটা নিয়ে কেউ ভাবেননি। তাহলে! ওই ছাত্রই দিলেন সমাধান। ‘‘স্যর যদি প্রত্যেক সিগন্যালে রবীন্দ্রসংগীত বাজানোর পাশাপাশি তা লাল-সবুজ হওয়ার কথা একটু ঘোষণা করা হয়, কোন দিকে কখন মানুষ পারাপার করবেন, তা জানানো হয়, তাহলে আমাদের সুবিধা হয়। কানে শুনে আমরা রাস্তা পেরতে পারি।’’
[আরও পড়ুন: নাসিম শাহকে ছাড়াই ভারতের বিরুদ্ধে নামতে হবে! বড় আপডেট দিলেন বাবর আজম]
তাঁর এই কথা মনে ধরে পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের। জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাঁরা ট্রাফিক পুলিশকে জানাবে। যদি পুলিশ সম্মতি দেয়, তবে আগামিদিনে রাস্তার ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল বদলের পাশাপাশি সেকথা ঘোষণাও করা হবে। যাতে চোখে না দেখলেও কানে শুনে মানুষ রাস্তা পেরতে পারেন। এদিনের কর্মশালায় বাগবাজার মাল্টিপারপাস, বেথুন, সাখওয়াত মেমোরিয়াল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের মতো ১২ স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা, শিক্ষিকা এবং কয়েকজন করে পড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। স্কুলপড়ুয়াদের পথনিরাপত্তা সংক্রান্ত পাঠ দিতে কী কী করা উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, স্কুলজীবন থেকেই যদি ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় গাড়ি চালানোর নিয়ম থেকে সিগন্যাল, সাইনেজ, গাড়িতে সিটবেল্ট বেধে বসা, হেলমেট পরে বাইক চালানোর মতো নিয়মকানুনগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়, তাহলে রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমবে। প্রত্যেক স্কুলেই তাই রোড সেফটি ক্লাব খোলা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে পথনিরাপত্তা নিয়ে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা লেখা, সেফটি নিয়ে ছবি দেখানো, ওয়ার্কশপ করা হবে। কোন সিগন্যালের, কোন সাইনেজের কী মানে সেখানে সব বোঝানো হবে। তবে শুধু পড়ুয়া নয়, তাঁদের অভিভাবকদেরও এই প্রশিক্ষণে শামিল করা হবে। যাতে বাচ্চাদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা এই গাইডলাইন মেনে চলেন।
একইসঙ্গে পরিবহণ দপ্তর পুলিশকে জানাবে যাতে সবুজ থেকে লাল সিগন্যাল হওয়ার মাঝে হলুদ সিগন্যালের সময়সীমা বাড়িয়ে ৮-১০ সেকেন্ড করা হয়। দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগে সবুজ থেকে লাল সিগন্যাল হওয়ার মাঝে সিগন্যাল হলুদ থাকত ১০ সেকেন্ড মতো। এখন তা কমে দু’সেকেন্ড করা হয়েছে। ফলে সুবজ সিগন্যাল দেখে গাড়ি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় আচমকাই তা লাল হয়ে যায়। যাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মাঝে হলুদ সিগন্যালের সময় যদি বাড়ানো যেত সেক্ষেত্রে গাড়ির চালক সতর্ক হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি লাল সিগন্যালে যেমন সময় দেখানো হয়, তেমনই সবুজ সিগন্যালেও এই সময় দেখানো হলে সাধারণ মানুষও তা দেখে রাস্তা পার হতে পারেন। তবে এসবই আপাতত পরিকল্পনা স্তরে রয়েছে। তবে পড়ুয়াদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের নিয়ে পথনিরাপত্তা সংক্রান্ত এই কর্মশালা চলবে। পরিবহণ দপ্তর, পুলিশের পাশাপাশি তাতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও যুক্ত করা হবে।