শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: মা, ছোট্ট এই শব্দই মানুষের সবচেয়ে বড় নিশ্চিন্তের আশ্রয়। সেই মায়ের পা ধুয়ে পুজো দিল জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচারা। সারাজীবন মা ও বাবার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার শপথও নিয়েছে খুদের দল। রবিবার ৮ মে আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস (Mother’s Day 2022)। তার ঠিক আগের দিনই হয় এই বিশেষ আয়োজন।
বিগত কয়েকবছর ধরে রকমারি মিড ডে মিল-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ধূপগুড়ি রেল স্টেশন সংলগ্ন বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবার স্কুলের প্রধানশিক্ষক শিক্ষারত্ন জয় বসাকের হাত ধরে নতুন শুরু হল ‘মাতৃপূজা’। অভিনব এই অনুষ্ঠান সম্ভবত রাজ্যের কোনও সরকারি বা সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুলে এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি বলেই ধারণা শিক্ষানুরাগী মহলের।
স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রীর কথা অনুযায়ী, এদিন তারা মাকে পুজো করল। আর সেই সঙ্গেই ভবিষ্যতে মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষাও নিল। অভিভাবকেরা জানান, আজকাল মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা বড় হওয়ার পর তাঁদের মা-বাবাকে খেয়াল রাখে না। বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। শনিবারের অনুষ্ঠান থেকে বাচ্চারা শিখল বাবা-মায়েদের প্রতি কীভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবে। এটা সমাজে একটা ভাল বার্তা দেবে বলেই আশা অভিভাবকদের।
[আরও পড়ুন: প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতার জের, মাওবাদী পোস্টার দিয়ে হুমকির অভিযোগে গ্রেপ্তার ১]
প্রধান শিক্ষক জয় বসাক বলেন, “স্কুলে এসে পড়াশোনা শিখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া একমাত্র বিষয় নয়। বাচ্চারা যাতে মানুষের মত মানুষ হয়, নিজেদের মা-বাবার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান। যেহেতু এতদিন লকডাউন ছিল তাই আমরা এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়িত করতে পারিনি। তাই ভেবেছিলাম ৮ মে আন্তর্জাতিক মাতৃদিবসের দিন এই অনুষ্ঠান করব। কিন্তু আমাদের স্কুলের অভিভাবকেরা বেশিরভাগ যেহেতু দিন মজুর। তাই তারা বলেন রবিবার ছুটির দিনে লোকের বাড়িতে কাজ পাওয়া যায়। তাঁদের আয় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্যই আমরা মাতৃদিবসের আগের দিন এই অনুষ্ঠান পালন করলাম।”
জয় বসাক জানান, স্কুলে মোট ২২২ জন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে ১৯৮ জন তাদের মায়েদের নিয়ে এসেছিল। বাকিরা অসুস্থ থাকায় আসতে পারেনি। এই ধরনের অভিনব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান জেলার ডি আই প্রাইমারি শ্যামল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, “এই স্কুল ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের শিশুমিত্র পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। আমি আশা করছি এই স্কুলকে দেখে জেলার অন্যান্য স্কুলগুলিও অনুপ্রাণিত হবে। তারাও এই ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।”