অভিরূপ দাস: ভারতীয়দের গড় আয়ু মেরেকেটে ৭০ বছর। সেখানে একশো চারে জটিল অস্ত্রোপচার! তার ঝক্কি কাটিয়ে তরতাজা, চাঙ্গা, সতেজ। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাল পশ্চিম মেদিনীপুরের কানাইলাল মালাকার। তাঁর যে বয়স, সেখানে মৃত্যু অত্যন্ত স্বাভাবিক। যদিও গুরুতর জটিল অস্ত্রোপচারের ঝঞ্ঝাট মিটিয়ে শতায়ু পেরোন প্রৌঢ় বলছেন, “যমরাজের মুখে কালি দিয়ে এখনও অনেকদিন বাঁচব।”
প্রস্রাব করতে গিয়ে পরে গিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। কুচকির অংশের হাড় ভেঙে তিন-চার টুকরো হয়ে যায়। বাইপাসের ধারের এক বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে আসেন কানাইলালবাবুর পরিবারের লোকেরা। ফর্টিস হাসপাতালের অস্থিরোগ বিভাগের শল্য চিকিৎসক ডা. অনিন্দ্যাংশু বসু চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালের অস্থিরোগ বিভাগের ডিরেক্টর ডা. রণেন রয় জানিয়েছেন, সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রোগীর বয়স। একশো চার বয়সের ব্যক্তির অগুনতি আনুসাঙ্গিক অসুখ থাকে। হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। এহেন জটিল অস্ত্রোপচার নিতে পারে না শরীর।
[আরও পড়ুন: ডিম্বাশয়ে বিশাল আকারের টিউমার! এসএসকেএমের চিকিৎসকদের কল্যাণে প্রাণ বাঁচল বৃদ্ধার]
এমন অস্ত্রোপচারের পর প্রশ্ন একটাই। একশো চারেও জুড়ে যায় হাড়? চিকিৎসকরা বলছেন, ১০৪ বছর বয়সে হাড় জোড়া সম্ভব নয়। অপেক্ষা করে থাকলে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আর কিছু না হোক এই বয়সে বেডশোর হয়ে পিঠে, গায়ে ঘা হয়ে যাবার সম্ভাবনা মারাত্মক। প্রৌঢ়র প্রক্সিমাল ফিমার বোন ভেঙে তিন-চার টুকরো হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে কম্পিউটারে থ্রিডি সিটি অ্যানালিসিস করা হয়। ‘ফিক্সেশন’-এর বদলে ‘রিপ্লেসমেন্ট’এই মন্ত্র করেন চিকিৎসকরা।
কুচকির যে অংশ থেকে পাটা নাড়াচাড়া করে সেই জায়গায় একটি বলের মতো অংশ থাকে। যার সাহায্যে পা নানানদিকে ঘোরানো যায়। কানাইলালবাবুর বামদিকের ওই বলটা ভেঙে গিয়েছিল। সেই বল ফেলে কুচকির একটি স্টিলের বল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোনও অল্প বয়সিদের এমনটা হলে জোড়া লাগতে ৯০ দিন লাগত। অপেক্ষা করে যেত। ১০৪ বছর বয়সে কাউকে তিন-চার মাস ফেলে রাখা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসদের কাজ থেকে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে দাঁড় করাতে হবে। স্টিলের যে বলটা কানাইলালবাবুর কুচকির উপরে বসানো হয়েছে, তার মেয়াদ দশ-পনেরো বছর। অস্ত্রোপচারের পর এখন রীতিমতো ব্যায়াম করছেন কানাইলালবাবু।