দীপঙ্কর মণ্ডল: স্ত্রীর এক সিদ্ধান্তেই নিমেষে তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan)। সুজাতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের পরই সৌমিত্র সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্ত্রী সুজাতার কী প্রতিক্রিয়া? দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গীর এই ঘোষণায় যেমন বিস্মিত সুজাতা, তেমনই আহতও। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, তৃণমূলে যোগদানকারী স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিজেপিই সৌমিত্রকে চাপ দিচ্ছে। তাই কান্নাভেজা গলায় সুজাতা বলছেন, ”স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে কোনও টিএমসি, বিজেপি আসতেই পারে না। জানি না, কারা তোমায় আমাকে বিচ্ছেদের বুদ্ধি দিচ্ছে।” স্বামী তাঁকে ছেড়ে গেলেও তিনি যে চিরকাল সৌমিত্রর স্ত্রী হিসেবেই পরিচয় বহন করবেন, তাও স্পষ্ট করে দিলেন সুজাতা।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতের পার্থক্যের জন্য মুহূর্তের মধ্য এতদিনকার সমস্ত লড়াইয়ের সাথীর সঙ্গে সম্পর্ক চিরতরে শেষ করে দেওয়া যায়, ভাবনাতেই ছিল না। তাই ধাক্কাটা সামলাতে একটু সময় লেগেছিল। তবু কি পারলেন সুজাতা খাঁ? সবটা সামলে উঠতে? পারেননি, তা বোঝাই গেল তাঁর কথায়।
[আরও পড়ুন: রাজনীতির টানাপোড়েনে দাম্পত্যে ভাঙন, সুজাতাকে বিচ্ছেদের নোটিস পাঠাচ্ছেন ‘ব্যথিত’ সৌমিত্র]
সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অনেক চেষ্টা করেও কান্না চাপতে পারলেন না কিছুতেই। আবেগভরা গলায় বলে উঠলেন, ”আমি সৌমিত্রের নামেই সিঁদুর পরেছি। আগামী দিনেও পরব। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্বর্গে তৈরি হয়। স্বর্গে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে মর্ত্যের কোনও রাজনৈতিক দল? আমরা রাম-সীতার মত, আমরা লক্ষ্মী-নারায়ণের মত। কেউ আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারে না। আজও আমি সৌমিত্রকে ভালবাসি। ওর নামে সিঁদুর, নোয়া পরেছি। আজীবন এসব আমার সঙ্গে থাকবে।” এরপর স্বামীর প্রতি তাঁর বার্তা, ”ওর ভালো হোক। বিজেপি ক্ষমতায় এলে ও যেন মুখ্যমন্ত্রী হয়। ওর এই আত্মত্যাগ যেন বিজেপি না ভোলে।”
[আরও পড়ুন: ‘দলের ডাকে এসেছিলাম’, পার্থর সঙ্গে বৈঠকের পর রাজীবের মন্তব্যে ধোঁয়াশা অব্যাহত]
সৌমিত্রর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কীভাবে দুর্দিনে সংগ্রাম করেছেন সুজাতা, তা উল্লেখ করে বললেন, ”ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, ওর যেন কোনও বিপদ না হয়। তবু ভবিষ্যতে সৌমিত্রর বিপদে সুজাতাই আগে রক্ত দেবে। হয়ত সুজাতা ওর পথের কাঁটা হয়ে যাচ্ছিল, যা কোনওদিনই হইনি, হবও না। তাই আমাকে বাদ দিয়ে ও যদি গগনচুম্বী সাফল্য পায়, তাহলে এই আত্মত্যাগ সার্থক মনে করব। নাহলে আর কীসের জন্য এই সম্পর্ক ভাঙা।” রাজনৈতিক টানাপোড়েনে দাম্পত্য সম্পর্ক এতটা তলানিতে এসে যাওয়ার নজির বোধহয় খুব বেশি নেই বঙ্গ রাজনীতিতে।