সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার বেকার যুবক, যুবতীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়। তারপর চাকরি না পেয়ে প্রতারিতরা বুঝে পেরে টাকা ফেরতের দাবি তুললেই তাদের অপহরণের ছক কষে আরও বেশি টাকা আদায়ের চেষ্টা। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন পুলিশের (Sunderban Police) সেই ছক বানচাল হয়ে যায়। কোচবিহারের মাথাভাঙা থেকে পুলিশের জালে ধরা পড়ে অপহরণকারীরা। উদ্ধার হয়েছেন তিন অপহৃতও। প্রায় নাটকীয় কায়দার অপহরণকারীদের ডেরায় অপারেশন চালানো হয়েছে। অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে কাকদ্বীপ আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় এক মহিলা ও তার এক পুরুষ বন্ধু। চাকরি না পেয়ে প্রতারিতরা টাকা ফেরতের দাবি জানালে ওই মহিলা তার স্বামীর সহযোগিতায় অপহরণের ছক কষে। গত ৯ অক্টোবর ঢোলাহাট থানার দড়িকৌতলা গ্রামের জনৈক শাহেনশাহ নেগাবান নিজের বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। ১১ অক্টোবর ওই ব্যক্তির স্ত্রী ফিরদৌসি নেগাবানের মোবাইল ফোনে ১২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। ১২ তারিখ তিনি ঢোলাহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে জানা যায়, শাহেনশাহকে কোচবিহারের মাথাভাঙায় কোনও গোপন আস্তানায় লুকিয়ে রেখেছে অপহরণকারীরা।
[আরও পড়ুন: মর্মান্তিক! স্নান করতে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেল সামশেরগঞ্জের ৫ পড়ুয়া]
এরপরই অপারেশনে নামে সুন্দরবন জেলা পুলিশ। এসপি বৈভব তিওয়ারির নির্দেশে পুলিশ আলাদাভাবে দু’টি টিম তৈরি হয়। একটি দল ঢোলাহাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ মণ্ডলের নেতৃত্বে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দেয়। অন্য দলটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ মণ্ডলের নেতৃত্বে তদন্তের গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখতে শুরু করে। কোচবিহার জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মাথাভাঙা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে অপহৃত শাহেনশাহ নেগাবান-সহ অন্য দুই ব্যক্তিকে গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে অপহরণকারী হিসেবে অভিযুক্ত দম্পতি রাতুল দেববর্মন ও তার স্ত্রী মুনমুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মাথাভাঙা আদালতে পেশের পর তিনদিনের ট্রানজিট রিমান্ডে কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, ধৃত মুনমুনের সঙ্গে ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়া অপহৃত অপর এক ব্যক্তি মোস্তাকিন নেগাবানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। তারা দু’জনে মিলেই এলাকার বেকার যুবক- যুবতীদের প্রচুর টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতারণা চক্র ফেঁদে বসেছিল। এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েও নেয় তারা। সম্প্রতি প্রতারিত যুবক-যুবতীরা টাকা ফেরতের জন্য মুনমুনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন মনমুন ও তার স্বামী রাতুল দু’জনে মিলে সেই টাকা জোগাড় করতে অপহরণের ছক কষে। সেইমত তারা মোস্তাকিনকে পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার নাম করে মাথাভাঙায় ডেকে পাঠায়। মোস্তাকিন তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় শাহেনশাহকে সঙ্গে নিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে কোচবিহারের মাথাভাঙায় যায়। সেখানে পৌঁছতেই ওই দম্পতি মোস্তাকিন, শাহেনশাহ ও তাদের গাড়ির চালক আসরাফ নাইয়াকে গোপন আস্তানায় লুকিয়ে রাখে। গোপন ডেরায় অপহৃতদের ওপর শারীরিক অত্যাচারও চলে বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরেও হবে না কানে ব্যথা, যন্ত্রাংশ তৈরি করে জাতীয় পুরস্কার জয় বাংলার কন্যাশ্রীর]
শাহেনশাহর মুক্তির জন্য তাঁর স্ত্রীর কাছে দাবি করা মুক্তিপণের ১২ লক্ষ টাকা পাঠাতে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয় অভিযুক্ত দম্পতি। পুলিশ ওই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই করে। মোবাইল ফোনের অবস্থান জেনে অপহরণকারীদের গতিবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। অভিযুক্ত দম্পতিকে শনিবার কাকদ্বীপ এসিজেএম আদালতে হাজির করলে তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোস্তাকিনকে মাথাভাঙা থানার অপর একটি মামলায় হাজির করানো হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।