সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ফের পাহাড়ে অশান্তির আঁচ। তিন বছর পর একদা প্রতাপশালী নেতা বিমল গুরুং (Bimal Gurung) অজ্ঞাতবাস ছেড়ে ফিরে আসার কয়েকদিনের মধ্যে অশান্ত দার্জিলিং। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (GJM) প্রেসিডেন্ট বিনয় তামাংয়ের অভিযোগ, বুধবার দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) টাকভর এলাকায় জোর করে পার্টি অফিস খুলতে যায় বিমল গুরুংয়ের সমর্থকরা। তাতে বাধা দিলে মোর্চার যুব সদস্যের উপর কুকরি নিয়ে হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পান, আপাতত গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভরতি। মোর্চার এফআইআরের ভিত্তিতে ২ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর।
মোর্চার অভিযোগ অনুযায়ী, আজ সকালে টাকভর এলাকায় বন্ধ থাকা গুরুংয়ের পার্টি অফিসটি খোলার চেষ্টা করেন তাঁর সমর্থকরা। গুরুং সংক্রান্ত মামলা এই মুহূর্তে আদালতের বিচারাধীন, তাই পার্টি অফিস খোলাও কার্যত বেআইনি বলে মনে করেন মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং (Binay Tamang)। তাই তাতে বাধা দিতে যান মোর্চার এক যুব সদস্য। তাঁর উপর ‘নৃশংস’ হামলা হয় বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বিনয় তামাং। তাঁর আরও অভিযোগ, ৩ বছর পর ফিরেই পাহাড়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছেন বিমল গুরুং। পাহাড়বাসীর কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন, এই অশান্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে গুরুংকে একঘরে করে দেওয়ার। বিনয় তামাংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ২ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গুরুতর জখম মোর্চার যুব সদস্য চিকিৎসাধীন দার্জিলিং সদর হাসপাতালে।
[আরও পড়ুন: গাড়ির ধাক্কায় মহানন্দা অভয়ারণ্যে মৃত্যু চিতাবাঘের, পর্যটকদের সর্তক হওয়ার আরজি বনপালের]
অক্টোবরের ২১ তারিখ আচমকাই অজ্ঞাতবাস ছেড়ে কলকাতায় উদয় হন বিমল গুরুং। সল্টলেকের গোর্খা ভবনে ঢুকতে বাধা পেয়ে এক পাঁচতারা হোটেল সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বার্তা দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকুণ্ঠ প্রশংসা করে একুশের ভোটে তাঁর হয়ে লড়াইয়ের কথা বলেন। ২০১৭এ পাহাড়ে অশান্তি তৈরির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে UAPA ধারায় মামলা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে শহরে এসে এভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন গুরুং, কেন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করল না, এসব প্রশ্ন উঠে যায়। স্বভাবতই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ান গুরুং। পাশাপাশি, পাহাড়ের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা নিয়েও জল্পনা উসকে ওঠে।
[আরও পড়ুন: লক্ষ্য একুশ, এবার অনুপম হাজরার নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত করার ভাবনা বিজেপির]
গুরুংয়ের ফেরার খবরে কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়ে বর্তমান মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চা প্রেসিডেন্ট বিনয় তামাং এবং জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপাকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে আশ্বস্ত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনয় তামাং সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ”গুরুং সিলেবাসে নেই। পাহাড়ে তার চ্যাপ্টার ক্লোজড।” এরপর আবার পালটা দিয়ে বিমল গুরুং বিজেপিতে চলে যাওয়া ১৭ জন কাউন্সিলর ফের তাঁর সঙ্গে ফিরেছেন বলে দাবি তোলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, বিমল গুরুং বনাম বিনয় তামাং লড়াই শুরু হল। পাহাড়েও তার প্রভাব টের পাওয়া গেল এই ঘটনায়।