সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো সমস্যা আজকের নয়। সরকারি এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বছরে কমপক্ষে ৯০ লক্ষ কন্যাভ্রূণের হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজস্থানেক রাজসমন্দ জেলার পিপলান্ত্রি গ্রামের বাসিন্দারা গড়েছেন একেবারে ভিন্ন এক নজির। সেখানে কন্যাসন্তান জন্মের পর ১১১টি চারাগাছ পোঁতার রেওয়াজ। আর এই 'পিপলান্ত্রি মডেলে'র ভূয়সী প্রশংসা করল সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এসভিএন ভাট্টি এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাজস্থানের 'স্যাক্রেড গ্রোভ' রক্ষার বিষয়টি নিয়ে। কী এই 'স্যাক্রেড গ্রোভ'? বনের সুরক্ষিত এলাকা যা পবিত্র বলে বিবেচিত হয় এবং ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের দ্বারা সুরক্ষিত- তাকেই এই নামে ডাকা হয়। পরিবেশ রক্ষায় রাজ্যের বন দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত এলাকার উপগ্রহ মারফত নজরদারি চালিয়ে এই অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য। আর সেই প্রসঙ্গেই শীর্ষ আদালতে উঠে আসে 'পিপলান্ত্রি মডেলে'র প্রসঙ্গ। বিচারপতি সন্দীপ মেহতা বলেন, ''রাজস্থানের একটি জেলায় যে মডেলটি রয়েছে তা অনুপ্রেরণাদায়ক। প্রভূত খননের ফলে গ্রামটির পরিবেশ বিপণ্ণ হয়। আর তারপরই সেখান সরপঞ্চের দূরদৃষ্টির ফলে শুরু হয় প্রত্যেক কন্যাসন্তানের জন্মের পরই ১১১টি করে গাছ পোঁতার রীতি। এখনও পর্যন্ত ১৪ লক্ষ গাছ পোঁতা হয়েছে। এর মাধ্যমে কন্যাভ্রুণ হত্যার নিষেধাজ্ঞার ফলে লিঙ্গসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর তারই ফলশ্রুতি ওই গ্রামে মহিলার সংখ্যা অন্য লিঙ্গের মানুষদের থেকে বেশি।''
কীভাবে শুরু হল এই 'পিপলান্ত্রি মডেল'? পনেরো বছর আগে এই রেওয়াজ চালু করেছিলেন গ্রামের তৎকালীন প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়াল। তাঁর মেয়ে কিরণ ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই প্রয়াত হন। কন্যাহারা বাবা মেয়ের স্মৃতিরক্ষায় এই রীতির প্রচলন করেন। যা পরবর্তী সময়ে সকলে গ্রহণ করে।
এদিকে এদিন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২ অনুযায়ী রাজস্থান সরকারকে 'স্যাক্রেড গ্রোভ' রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর তা নিশ্চিত করতে হাই কোর্টের নজরদারিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথাও বলা হয়েছে।