সম্যক খান, মেদিনীপুর: একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন। অবশেষে দলের সিদ্ধান্তে সরতেই হল সিপিএম (CPM) নেতা সুশান্ত ঘোষকে। মাঝপথে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে তাঁকে কার্যত অপসারিত করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করা হয়েছে বিজয় পালকে। শুক্রবার দলের জেলা কমিটির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন খোদ দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Selim)। পদ হারানোর পর থেকেই সুশান্তবাবুকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইলে রিং হলেও তিনি ফোন ধরছেন না। তবে নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিজয় পাল বলেছেন, ''সুশান্তবাবুর স্ত্রী খুব অসুস্থ। উনি(সুশান্ত) দলের কাছে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। দলের রাজ্য কমিটিও অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ঘোষণা এদিন হয়েছে।''
শুক্রবার দলের জেলা কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক অবশ্য সুশান্তবাবুর নেতৃত্বেই শুরু হয়। গত লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Polls) দলের শোচনীয় হাল নিয়ে ছিল পর্যালোচনা বৈঠক। দল কেন ব্যর্থ, জেলা কমিটির বৈঠকে সেই রিপোর্টও পেশ করেছেন সুশান্ত ঘোষ (Susanta Ghosh)। কিন্তু তার পর সেই বৈঠকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি। গত ২০২২ সালে দলের জেলা সম্মেলনে ভোটাভুটিতে তাপস সিনহাকে হারিয়ে জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন কঙ্কালকাণ্ডে নাম জড়ানো সুশান্তবাবু। বিগত বামফ্রন্ট আমলে মন্ত্রী থাকাকালীন নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। বামফ্রন্ট বিদায় নেওয়ার পর কঙ্কাল উদ্ধার মামলায় দীর্ঘসময়ে জেলে কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: ওয়ানড়ের ভূমিধসে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়েছিলেন ৩৫টি প্রাণ, সাহসিকতার পুরস্কার তামিলনাড়ুর নার্সকে]
পরবর্তীকালে দলের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বই লিখে দল থেকে সাসপেন্ডও (Suspend) হয়েছেন গড়বেতার দাপুটে নেতা সুশান্ত ঘোষ। তার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে দলের জেলা সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিলেন। কিন্তু ইদানিংকালে নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। দলীয় সূত্রের খবর, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক মহিলার সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সহবাসের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ওই মহিলা তথ্য,প্রমাণ-সহ রাজ্য সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। দলের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিশনও (Investigating Commission) গঠন করা হয়। কমিশন নির্যাতিতা মহিলা, অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষ থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গেও কথাবার্তা বলে। তার ভিত্তিতে সুশান্তবাবুকে দলের জেলা সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফার নির্দেশ দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: যিনি নাচেন, তিনি বন্দুকও চালান! অলিম্পিক শেষে মনুর নজর ভরতনাট্যমে]
জানা গিয়েছে যে প্রথমে পদত্যাগ (Resign)করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত ঘোষ। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তাকে ফাঁসানোর পাল্টা অভিযোগও এনেছিলেন। কোনও অবস্থাতেই সম্মেলনের আগে জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়বেন না বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় তাঁর নাম এতটাই ভাইরাল হয়ে যায় যে দলীয় নেতৃত্বকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শেষমেশ দলের সিদ্ধান্তেই সুশান্তবাবুকে অব্যাহতি চাইতে বাধ্য করা হয়। জেলা সম্পাদকের পদ হারান তিনি।