‘জীবনে আর কিছুই বাকি নেই…’ যদি কখনও এই ভাবনা এসে থাকে, তাহলে একবার ‘দিল বেচারা’ দেখুন। দেখুন কীভাবে এ ছবি বেঁচে থাকার রসদ জোগায়? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- মুকেশ ছাবড়া
অভিনয়ে- সুশান্ত সিং রাজপুত, সঞ্জনা সঙ্ঘী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সইফ আলি খান।
সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’ মুক্তি পেল। গোটা দেশ যেন রুদ্ধশ্বাসে ঠিক এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এইপ্রথম কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একেবারে বিনামূল্যে সিনেমা দেখার সুযোগ পেলেন দর্শকরা। নেপথ্যে সেই সুশান্ত। যাঁর প্রয়াণের পর গত এক মাস ধরে এত চর্চা, অনুরাগীদের এত আবেগ-ভালবাসা-বিতর্ক… তাই সেই ছবির রিভিউ লিখতে বসে আলাদা একটা আবেগ-অনুভূতি যে কাজ করবেই, তা বলাই বাহুল্য। কোনওরকম কাটাছেঁড়া নয়, পারফরম্যান্স বক্সে কোনও নম্বরও নয়! সে জায়গাও রাখেননি সুশান্ত। শুধু লিখব একটা মন ভাল করা গল্পের কথা। সিনেমা শেষের পরও যার রেশ থেকে যায়।
‘এক থা রাজা, এক থি রানি। দোনো মর গ্যায়ে, খতম কহানি’… নাহ! অতটা সহজে এই গল্প শেষ হতে দেয়নি ‘দিল বেচারা’র ইম্যানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র ওরফে ম্যানি। সব হিসেব ওলট-পালট করে দিয়েছে প্রেমিকা কিজির জীবনে। আর দর্শকদের জীবনেও। যে অভিনেতা কোনওরকম কুণ্ঠাবোধ না রেখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকদের কাছে অনুরোধ করতে পারেন, “প্লিজ, আমার সিনেমা দেখুন, নাহলে হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না…” সেই সমস্ত দর্শকদের হিসেবেও গরমিল হতে বাধ্য সুশান্তের ‘দিল বেচারা’র জন্য!
জীবনে আর হাতে গোনা ক’টা দিন, কিন্তু তবুও হাসিমুখে সেই রণক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়! পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে আর মাত্র খানিকক্ষণের অপেক্ষা জেনেও কাউকে ভাল লাগা, তার প্রেমে পড়া, কোনওরকম সংকোচ না রেখে সাহস করে মনের কথা বলা, স্বপ্নে ভেসে যাওয়া… সোজা কথা নয়। আবার কখনও বেঁচে থাকার আর্তিটুকু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা, তার অনুপস্থিতিতেও যেন কেউ তাকে মিস না করে – সেসবের রাস্তা তৈরি করে যাওয়া, অনেকটা সাহসের প্রয়োজন হয় এরকম মনোভাবাপন্ন হওয়ার জন্য। ‘দিল বেচারা’র ম্যানিও (সুশান্ত) ঠিক সেরকমই। নেপথ্যে ক্রেডিটটা অবশ্যই পরিচালক মুকেশ ছাবড়ার।
[আরও পড়ুন: ‘আর্যা’র হাত ধরে দুর্ধর্ষ কামব্যাক সুস্মিতা সেনের]
এক মিষ্টি প্রেমের গল্প। যে গল্প জীবনের খামতিগুলোকেই নিজের ‘ব্যাজ’ বানিয়ে নিয়ে চলতে শেখায়। সাধারণ হয়েও অসাধারণ! না, সুশান্ত নেই বলেই যে ‘দিল বেচারা’র (Dil Bechara) এত ভূয়সী প্রশংসা, তা নয়। নেপথ্যের কারণটা, তাঁর মনভোলানো অভিনয়। সহজ-সরল, সাদামাটা, প্রাণবন্ত একটা ছেলে যে নিজের জীবনের আঁধারগুলো ঢেকেও অনায়াসে অন্যের সূর্য হয়ে উঠতে পারে। নিজে পৃথিবীতে আর কটা মাত্র দিনের অতিথি জেনেও অন্যের চোখের জল মোছাতে পারে। ‘ছিছোঁড়ে’র পর আবারও, এই সিনেমাতেও বেঁচে থাকাতে শেখাল সুশান্ত। শেখাল দুঃসময়েও কীভাবে ফিনিক্স পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যেতে হয়।
গোটা সিনেমাজুড়ে একটা মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়ালেও কোথায় যেন ক্ষণস্থায়ী জীবনের একটা অন্যদিকের সঙ্গে পরিচয় করাল ‘দিল বেচারা’। ম্যানি-কিজির দুষ্টি-মিষ্টি রোম্যান্স, হাসিঠাট্টা, আবেগ দেখে অজান্তেই চোখের কোণ ভিজতে বাধ্য। এই গল্প ক্যানসার আক্রান্ত কিজি বাসুর হলেও ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর খেতাব ম্যানিরই প্রাপ্য। কারণ, গল্পের ইতি টানল সে নিজেই। পুরোটাই যেন একেবারে নিজের প্ল্যান মাফিক।
‘দিল বেচারা’র অভিনেত্রী সঞ্জনা সঙ্ঘীও অনবদ্য। কিজি বাসুর মা-বাবার ভূমিকায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee) এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ও (Saswata Chatterjee) দুর্ধর্ষ। জামসেদপুরের সাদামাটা বাঙালি পরিবার। কেয়ারিং মা স্বস্তিকা। আর আদুরে, মেয়েকে নিয়ে চিন্তাশীল বাবার ভূমিকায় শাশ্বত। পুরো গল্পেই দু’জনের চরিত্র বেশ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেছে। ছোট্ট দৃশ্যে অতিথি শিল্পী হিসেবে নজর কেড়েছেন সইফ আলি খানও (Saif Ali Khan)। সবমিলিয়ে হাসি, কান্না, মজা-ঠাট্টা.. দর্শকদের ভাললাগার সবরকম উপকরণই মজুত এই ছবিতে। ‘দিল বেচারা’ সিনেমার ট্রেলার মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেমন অ্যাভেঞ্জার্সদের পিছনে ফেলে দিয়ে সর্বকালের সেরা রেকর্ড গড়েছিল, এই সিনেমাও যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ময়দানে এক নয়া ইনিংস গড়বে, তা হলফ করে বলাই যায়। শেষ অবধি শুধু একটাই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করে – কেন এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে, তোমার তো আরও অনেক ছবি উপহার দেওয়ার ছিল সুশান্ত?
[আরও পড়ুন: অলৌকিক শক্তির মোড়কে এক বলিষ্ঠ নারীবাদের কাহিনি ‘বুলবুল’]
The post মৃত্যুর পরও বাঁচতে শিখিয়ে গেল ‘দিল বেচারা’র ম্যানি সুশান্ত appeared first on Sangbad Pratidin.