অপরাজিতা সেন: নন্দীগ্রাম নিয়ে মামলা শেষ হওয়ার আগেই সেখানকার বিধায়ক পদ থেকে সরে যেতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি শীর্ষমহল সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তিনি কাঁথি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রেল বা গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী হয়ে পরের বিধানসভা ভোটে মোকাবিলা করবেন তিনি। তবে জিততে পারলেই তখন নন্দীগ্রাম ছাড়বেন শুভেন্দু। অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডাও এতে সম্মতি দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে দিল্লির কিছু পরিকল্পনা আছে। যেমন, লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হুগলি থেকে সরিয়ে বীরভূমে শতাব্দী রায়ের মুখোমুখি ফেলা হবে। শুভেন্দু অবশ্য লকেটকে তমলুক আসনে চাইছেন। ভারতী ঘোষ প্রার্থী হবেন ঘাটাল কেন্দ্রে। পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন মুখ প্রার্থী হবেন। এঁদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারে ঘোরানো হবে। মিঠুন চক্রবর্তীকে উত্তর কলকাতায় চাইছে দল। যদিও মিঠুন উত্তর চব্বিশ পরগনা বা কোনও জেলার আসন পছন্দ করছেন। উত্তরবঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের আসনটি নিরাপদ নয় বলে গোয়েন্দাসূত্রে খবর। সভাপতির আসন বদল উচিত হবে না বলে তাঁকে এলাকায় জোর দিতে বলা হচ্ছে। দমদমে তপন শিকদারের ভাইপো সৌরভ শিকদারের কথা ভাবছে দিল্লি। বিজেপি সূত্রে খবর, অন্য রাজ্যে জেতা বহু আসন এবার নিশ্চিত নয়।
[আরও পড়ুন: বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অসমে, পালটা প্রতিবাদে মহিলারা, প্রিয়জনকে বাঁচাতে আত্মহত্যাও]
তাই বাংলা নিয়ে এখন থেকে প্রাথমিক পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। আরও কিছু কৌশলী সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন, সংখ্যালঘুদের নরম করার নীতিতে দল চলবে। উগ্র হিন্দুত্বের কথা কমানো হবে বাংলায়। পাশাপাশি সিপিএমের সঙ্গে ‘প্যাসিভ কোঅর্ডিনেশন’ বাড়ানো হবে। সেটা গোপনে, ব্যক্তিবিশেষে এবং স্থানীয়ভাবে। কেন্দ্রের টিম আসা বাড়বে। মিঠুন (Mithun Chakraborty) নাকি সলমন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কিছু অরাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য। মানিকতলা বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন সজল ঘোষ। সিবিআই, ইডি যেমন চলছে চলবে। বঙ্গবিজেপি এর মাত্রা বাড়াতে চায়। কিন্তু দিল্লি বলছে, এসব বাড়াবাড়ি হলে মানুষের সহানুভূতি তৃণমূলের প্রতিই বাড়বে। এ বিষয়ে একেবারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন অমিত শাহ।
তদন্তের বিষয়গুলির জন্য শীর্ষমহলে অঘোষিত নোডাল অফিসার কাজ করছেন, তিনিই দল ও এজেন্সিগুলির মধ্যে সমন্বয় রাখছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে, বাংলায় এখন থেকেই বিজেপি অঙ্ক কষা শুরু করেছে। যা জানা যাচ্ছে, এই পরিকল্পনা বহুমুখী। রাজ্য নেতৃত্বের উপর তেমন আস্থা নেই দিল্লির। ফলে এখন থেকে নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে দিল্লির। আর্থিক মদতও বাড়ানো হতে পারে। সব শাখা সংগঠনের এলাকাভিত্তিক কিছু কার্যকর্তাকে টু-হুইলার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে। প্রতি এলাকায় দৃশ্যমানতা বাড়াতে পতাকা ও অন্য উপকরণ সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। সূত্রের খবর, শুভেন্দু চাইছিলেন তমলুকে দাঁড়াতে। কাঁথিতে ভাই দিব্যেন্দু বা সৌমেন্দুকে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু দুই ভাইকে দুই আসন দেবে না বিজেপি। তাই শুভেন্দু বাবার আসন হোম সিট কাঁথি বেছেছেন। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে দক্ষিণ কলকাতার জন্য ভাবা হয়েছে।
শুভেন্দু লোকসভায় জেতেন, তাহলে অশোক লাহিড়ী বিরোধী দলনেতা হবেন। বাংলায় ভোটে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। দিলীপ ঘোষ নিজের জায়গাতেই থাকছেন। সৌমিত্র খাঁকে আবার প্রার্থী করা হবে কি না, জল্পনা আছে। শমীক ভট্টাচার্যকে বসিরহাট কেন্দ্রে ভাবা হয়েছে। দিল্লি এখন বেশ কিছু বিশিষ্ট নাগরিককে খুঁজছে। নানা পেশার নতুন মুখকে প্রার্থী করবে তারা। জেলায় জেলায় আসনপিছু তিনটি করে নাম সংগ্রহ চলছে। স্ক্রুটিনি হবে। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে দল বেহাল হবে, এটা দিল্লি জানে।
[আরও পড়ুন: মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ! আইনি বিপাকে যোগগুরু রামদেব]
তবু লোকসভার জমি চাষের জন্যে সবরকম চেষ্টা করবে তারা। কিন্তু আসল নজর থাকছে লোকসভাতেই। এখনও যা রিপোর্ট, বিজেপি সাতটি আসনে নিশ্চিত এগিয়ে। দিল্লি উদ্বিগ্ন। দরকারে সিনিয়র প্রভাবশালী বিধায়কদের কয়েকজনকে লোকসভায় প্রার্থী করা হবে। তার সমীকরণ তৈরিও শুরু হয়েছে। রাহুল সিনহা বা বারবার পরাজিতদের এবার প্রার্থী করা হবে না।