সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় সপ্তাহ তিনেক ধরে ধোঁয়াশা জিইয়ে ছিল। এক শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘ দু’দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে ঠিক দু’সপ্তাহ পর শনিবারের বারবেলায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে বৃত্তটা সম্পূর্ণ করলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Ahhikary)। মেদিনীপুর কলেজ মাঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিশাল জনসভায় এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন তিনি।
২৭ নভেম্বর, দুপুর প্রায় দেড়টা। তিন দপ্তরের মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের সদ্যপ্রাক্তন বিধায়ক। ছেড়ে দিয়েছিলেন সরকারি অন্যান্য দায়িত্বও। এরপর তৃণমূলও তাঁকে সংগঠনের নানা পদ থেকে ছেঁটে ফেলে। বাকি ছিল বিধায়ক পদ এবং দলের প্রাথমিক সদস্যপদ। চলতি সপ্তাহের সোমবার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য কাঁথির বাড়ি থেকে রওনা হলেও, শেষপর্যন্ত বিধানসভায় এসে পৌঁছননি শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার সেই কাজটিও সম্পূর্ণ করলেন। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অধিকারী পরিবারের জনপ্রিয় নেতা।
[আরও পড়ুন: আদিবাসী, মতুয়ার পর এবার কৃষক পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন অমিত শাহর, খেলেন কলাপাতায়]
শুভেন্দুর বিজেপিতে (BJP) যোগদান নিশ্চিতই ছিল। কখন, কোথায় সেই পট পরিবর্তন ঘটবে, ঘাসফুল ঢেকে দেবে রাশি রাশি পদ্ম, তারই অপেক্ষা ছিল রাজনৈতিক মহল। সরাসরি দিল্লিতে গিয়ে যোগদান নাকি নিজের গড়েই বড় কোনও নেতার কাছে হাতেখড়ি, এ নিয়েও বিস্তর চর্চা চলেছে। শুভেন্দু বেছে নিয়েছেন দ্বিতীয় রাস্তা। ১৯ তারিখ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাজ্য সফরে মেদিনীপুরের (West Midnapore) সভাতেই নন্দীগ্রামের নেতার রাজনৈতিক পরিচয় পালটে গেল। অমিত শাহর সভামঞ্চে পুরনো ব্যক্তিই নতুন পরিচয়ে – বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে অবশ্য তৃণমূলকে ৬ পাতার খোলা চিঠি লিখে যাবতীয় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। নতুন কেরিয়ারের প্রবেশের মুহূর্তে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রাক্তন, বর্তমান সহকর্মীদের অনেকে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যবাসীর চৌকাঠে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা, বাংলার ১ কোটি দুয়ারে পৌঁছল মমতার সরকার]
এমনিই তাঁর অনুগামীর সংখ্যা কম ছিল না কখনও। রাজ্য সরকার এবং শাসকদলের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণার পর সেই সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে, যার প্রতিফলন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ‘আমরা দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং। পূর্ব মেদিনীপুরের বহু তৃণমূল নেতা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা একেবারেই শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করবেন। করলেনও তাই। শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি দলবদলের খাতায় নাম লেখালেন আরও বেশ কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক, নেতা। বঙ্গ রাজনীতিতে এই তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের ফলে একুশের বিধানসভা নির্বাচন যেন অলিখিতভাবে হয়ে দাঁড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী।