shono
Advertisement
Swastika Mukherjee

একই অঙ্গে কত রূপ! একদিকে পুজোর ছবির প্রমোশন, অন্যদিকে ‘উৎসবে না’

সোশাল মিডিয়াতেই পুজোয় নিজের আসন্ন ‘টেক্কা’ ছবির প্রচারমূলক পোস্ট করার পর থেকেই বিতর্কে স্বস্তিকা।
Published By: Akash MisraPosted: 05:16 PM Sep 11, 2024Updated: 05:43 PM Sep 11, 2024

স্টাফ রিপোর্টার : সেই কবে শক্তি চট্টোপাধ‌্যায় তঁার কাব‌্যগ্রন্থের নাম রেখেছিলেন ‘ধর্মে আছো, জিরাফেও আছো’! দীর্ঘ ছয় দশক পর প্রয়াত কবির সেই শব্দবন্ধেরই প্রতিধ্বনি যেন স্বস্তিকা মুখোপাধ‌্যায়ের মুখে। গত বুধবার রাতে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদী জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেখানে মানুষের ক্ষোভবিক্ষোভের মাঝেই নিজের হাসিমুখের ছবি পোস্ট করেছিলেন সোশাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নিন্দার ঝড় উঠতে দেরি হয়নি। যেখানে ঘৃণ‌্য এই ঘটনার প্রতিবাদে সামিল ছাত্র-ছাত্রী, গৃহবধূ, যুব বা প্রবীণ– এক কথায় গোটা নাগরিক সমাজ এবং তাঁদের প্রতিবাদী চেতনা নিখাদ, সেখানে সেলিব্রিটি নায়িকা কি না নিজের হাসিমুখের সেলফি তুলে পোস্ট করছেন!

Advertisement

নিন্দার ঝড়ের মুখে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘বেশ করেছি’ ভঙ্গিতে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে গোল পাকিয়েছেন স্বস্তিকা (Swastika Mukherjee)। এবার তিনি লেখেন, ‘প্রতিবাদে আছি। চিৎকারে আছি। হাসিতেও আছি!’ বৃহস্পতিবার রাতে করা সেই পোস্টের সঙ্গে আরও দুটি হাসিমুখের সেলফিও দেন অভিনেত্রী!

জল তাতে ঘোলা হয়েছে আরও বেশি! ক্ষোভের স্বতস্ফূর্ত বহিপ্রকাশের জমায়েত-মাঝে দঁাড়িয়ে হাসি মুখের নতুন সেলফি-সহ স্বস্তিকার পরবর্তী এই পোস্ট নতুন করে ঘি ঢেলেছে আগুনে। পোস্টের কমেন্ট বক্সে কারও শ্লেষাত্মক মন্তব‌্য, ‘পড়তি বাজারে নিজেকে ভাসিয়ে রাখার জন‌্য আর কত নাটক হবে?’ কারও ঠেস দেওয়া প্রশ্ন– জমায়েতে আজাদির স্লোগান কীসের জন‌্য দেওয়া হল? বাংলাদেশের ছবির বাজারে কল্কে পাওয়ার জন‌্য কি?

প্রশ্নটা হচ্ছে হঠাৎ করে সৃজিত, স্বস্তিকারা পথে কেন? কারণটা প্রকাশ পেতে সময় লেগেছে ৪৮ ঘণ্টা। সোশ‌াল মিডিয়াতেই পুজোয় নিজের মুক্তি-আসন্ন ‘টেক্কা’ ছবির প্রচারমূলক পোস্ট করার পর। শনিবারের সেই পোস্টে স্বস্তিকা লিখেছেন, ‘সাহেব বিবি গোলামের দেশে, আস্তিনে থাক... এবার পুজোয় দেখা হচ্ছে #টেক্কা-র সাথে!’

সৃজিত মুখোপাধ‌্যায় পরিচালিত এই ছবিতে নিজের অভিনীত চরিত্র ‘ইরা’-র প্রচার করতেও কমতি রাখেননি অভিনেত্রী। তার পর থেকেই স্বস্তিকা-সৃজিতদের নিয়ে রঙ্গ রসিকতা বেড়েছে। সে রঙ্গ-তামাশার কারণ সেই স্বস্তিকারই আরেকটি পোস্ট। শনিবার পুজোয় মুক্তি পেতে চলা নতুন ছবির প্রচারের পরদিনই নতুন একটি পোস্টে অভিনেত্রী সোচ্চার চিৎকার করে লিখেছেন, ‘উৎসবে ফিরছি না।’ যা দেখে নেটিজেনদের প্রশ্ন, উৎসবে যিনি নিজে নেই, তিনিই সিনেমা হলে তাঁর নতুন ছবি দেখতে আমজনতাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন কী ভাবে?

নাগরিক সমাজের মিছিলে, প্রতিবাদের জমায়েতে স্বস্তিকা-সৃজিতদের পা মেলানো, রাত দখলের রাজপথে আর পঁাচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে থাকা যে তাঁদের নতুন ছবির ‘ছদ্ম’ প্রমোশনাল ক‌্যাম্পেন, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। কারণ সৃজিত বা স্বস্তিকা জানেন, মিছিল করা, প্রতিবাদে মুখর হওয়া এই নাগরিকরাই মাল্টিপ্লেক্স বা ওটিটি-তে তাঁদের ছবির দর্শক। তাই এই মিছিলে পা মেলানোর ‘চিত্রনাট্য’। চতুর সেই চাল ভেস্তে দিতেই বোধ হয় সোশ‌াল মিডিয়ায় অনেকে স্বস্তিকার আসন্ন পুজো রিলিজ টেক্কা-সহ অন্যদের ছবি-নাটক বয়কটের ডাক দিতেও শুরু করেছেন। কেউ লিখছেন, ‘রাত দখলে যারা উৎসব বাতিলের ডাক দিয়েছিল, উৎসবের দিনে তাদের পেটের রুজিরোজগার নির্ভরশীল। তাহলে আসুন তাদের কথাই না হয় শুনি! উৎসবে ফিরব না, সিনেমা দেখতেও যাব না।’

বয়কটের ডাক উঠেছে প্রতিবাদের মিছিলে পা মেলানো আরেক অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর ‘বিনোদিনী অপেরা’ নাটক ও জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন‌্যতম নেতা কিঞ্জল নন্দ অভিনীত ‘কঁাটায় কঁাটায়’ ধারাবাহিক বয়কট করারও। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অ‌্যাকাডেমিতে ‘বিনোদিনী অপেরা’ নাটকের শো রয়েছে। সেই শো বয়কট করার ডাক উঠে গিয়েছে ‘উৎসবে না ফেরা’-র আবহে। এ প্রসঙ্গে সোশ‌াল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে রাখা হয়েছে অতি নিরীহ একটি প্রশ্ন। পোস্টদাতা জানতে চেয়েছেন, ‘এই শো-র দিন আমরা কি অ‌্যাকাডেমিতে হাজির হয়ে শো চলাকালীন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলতে পারি!’ একইভাবে জি ফাইভে নিজের মুক্তিপ্রাপ্ত ধারাবাহিকের প্রচার করতে দেখা গিয়েছে জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের নেতা কিঞ্জল নন্দকে। যা নিয়ে রসিকতা ও টিপ্পনির বন‌্যা বইছে নেট দুনিয়ায়। ‘উৎসব বয়কট’ করা কিঞ্জলের ধারাবাহিক দেখব কেন?– প্রশ্ন সচেতন জনতার। একইভাবে প্রতিবাদী আন্দোলনে শ্রীলেখা মিত্র, বাদশা মৈত্র‌, উষশী চক্রবর্তীদের মুখ দেখানোকেও প্রচারের আলোয় ভেসে থাকার চেনা চেষ্টা বলে সবার ধারণা।

গোটা বিষয়টি সহজ বাংলায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন গায়ক শিলাজিৎ একটি ভিডিও বার্তায়। সেখানে শিলাজিৎ সাফ বলেছেন, শিল্প-সংস্কৃতি-অভিনয় জগতের বাসিন্দাদেরও আসলে নিজেদের দোকান চালিয়ে সংসার টানতে হয়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের একটা পেশা আছে। যেমন চাষিরা চাষ করে, তেমনই আমরাও আমাদের মতো করি। একজন রাজনীতিবিদ যেমন এখন কাজ করছেন, একজন সাংবাদিক কাজ করছেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করতে বাধ্য, একজন চা বিক্রেতা চা বিক্রি করছেন, সবজি বিক্রেতা সবজি বিক্রি করছেন, সেরকমই আমাদের একটা দোকান আছে। অভিনয়ের দোকান, গানের দোকান, সেই দোকানটা আমাদেরও চালাতে হবে। একদম আপনাদের মতোই সেই দোকান চললে আমাদের সংসার চলে।’’

তার পরও অবশ‌্য স্বস্তিকা-সৃজিত-সুদীপ্তা-কিঞ্জলদের ‘প্রতিবাদ’ চলছে। উৎসব বয়কটের ডাক চলছে। সঙ্গে সমানতালে চলছে নিজেদের সিনেমা-নাটক-সিরিয়ালের প্রচার। এসব দেখেশুনে মাথায় আসছে সুধীন দাশগুপ্তের সুরে গাওয়া মান্না দে-র অতি পরিচিত গানের কলি- ‘‘একই অঙ্গে এত রূপ দেখিনি তো আগে...’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • তার পরও অবশ‌্য স্বস্তিকা-সৃজিত-সুদীপ্তা-কিঞ্জলদের ‘প্রতিবাদ’ চলছে।
  • অভিনয়ের দোকান, গানের দোকান, সেই দোকানটা আমাদেরও চালাতে হবে।
Advertisement