সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় (Syria) চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন বাশার আল আসাদ (Bashar al-Assad )। ফলে আরও ৭ বছর ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। বৃহস্পতিবার দেশের পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে ভোটদানের হার ৭৮.৬ শতাংশ। এর মধ্যে আসাদ পেয়েছেন ৯৫.১ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ সালৌম আবদুল্লাহ ও মাহমুদ আহমেদ মারি পেয়েছেন যথাক্রমে ১.৫ শতাংশ এবং ৩.৩ শতাংশ ভোট। যদিও সিরিয়ার বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছে। পাশাপাশি আমেরিকা-সহ অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলিও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও তাতে আমল দিতে নারাজ আসাদ।
সিরিয়ায় প্রায় ৬ দশক ধরে ক্ষমতায় আসাদের পরিবার। তাঁর বাবা হাফিজ আল আসাদ ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর উত্তরসূরি হিসেবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন বাশার আল আসাদ। ২০০০ সালে তিনি এই কুরসিতে বসেন। কিন্তু তার দশ বছর পর থেকেই সিরিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ২০১১ সালে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন বিরোধীরা। তাতেই গুলি চালায় সরকারের বাহিনী। এরপরই দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। একদিকে রাশিয়া-ইরানের সমর্থন পায় আসাদ-বাহিনী। অন্যদিকে, আমেরিকা এবং পশ্চিমী দেশগুলির সমর্থন পেতে থাকে বিদ্রোহী এবং কুর্দ জঙ্গিদের বাহিনী। দু’পক্ষের মধ্যে এখনও পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ মানুষ। ইতিমধ্যে রাশিয়া এবং ইরানের সাহায্যে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে আসাদ-বাহিনী। কিন্তু বাকি ৩০ শতাংশ কিছুটা কুর্দ জঙ্গি এবং বিরোধীদের দখলে রয়েছে। তবে যুদ্ধের কারণে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যে বিদেশে শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ। এই পরিস্থিতিতেই এবারের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত সরকারি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এবং বিদেশে সিরিয়া কিছু দূতাবাসে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মেহুল চোকসিকে ফেরত নিতে নারাজ অ্যান্টিগা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফেরানো হতে পারে ভারতে]
তবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ করেছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশ। সেখানে প্রতিবাদ মিছিলেরও আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাসিত বিরোধী নেতারা এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকার বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই নির্বাচনকে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তাঁদের দাবি ছিল সিরিয়ার নির্বাচন রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে করতে হবে। তা মেনে নেয়নি আসাদ প্রশাসন। এর আগে দেশজুড়ে লড়াইয়ের মধ্যে ২০১৪ সালেও সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা বিরোধীরা বর্জন করেছিল। এরপর থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতি আসাদের অনুকূলে যেতে থাকে এবং রাশিয়ার বিমান হামলা আর ইরানের সামরিক সহযোগিতায় বড় শহরগুলিতে আসাদ-বাহিনী আবারও কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হয়। আর এবার ভোটেও জিতে গেলেন বাশার আল আসাদ। তবে সামনে তাঁর চ্যালেঞ্জও কম নয়। বিশেষ করে এতদিনের যুদ্ধের পর দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করা এবং দেশের বাকি অংশ পুনরুদ্ধার করা।