shono
Advertisement

‘বিশ্বকাপে ভারতকে সামনে দেখলেই পাকিস্তানের ঘাড়ে ভূত চাপে’, বিস্ফোরক দানিশ কানেরিয়া

নিজের দেশের বোর্ডের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার।
Posted: 02:23 PM Oct 21, 2021Updated: 12:46 AM Oct 22, 2021

হিন্দু বলে দানিশ কানেরিয়াকে (Danish Kaneria) কোণঠাসা করেছিলেন পাক দলের কিছু ক্রিকেটার। প্রায় বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার শোয়েব আখতারের এহেন অভিযোগের পরে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল উপমহাদেশের ক্রিকেটে। বিতর্কিত প্রাক্তন পাক লেগ স্পিনার আপাতত বিতর্ক থেকে খানিকটা দূরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T 20 World Cup 2021) রবিবারের ভারত-পাকিস্তান মহাম্যাচের আগাম বিশ্লেষণ করলেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের কাছে। শুনলেন কৃশানু মজুমদার

Advertisement

আপনি এখন কোথায় রয়েছেন?
কানেরিয়া: আমি পাকিস্তানে নেই এখন। কোথায় আছি পরে জানাব আপনাকে।

আচ্ছা সে না হয় পরে বলবেন। রবিবারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আসা যাক। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে আপনারা বারবার হেরে যান কেন?

কানেরিয়া: (হেসে) এই রহস্যের সমাধান আজ পর্যন্ত করতে পারলাম না। বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে দেখা হলেই পাকিস্তানের ঘাড়ে ভূত চাপে। রসিকতা করে বললাম। কিন্তু আমার যা মনে হয়, তা হল ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে পাকিস্তানের নার্ভ ফেল করে। স্নায়ুর চাপটা রাখতে পারে না। ভারত কিন্তু টেনশনের ম্যাচের চাপ ভালই সামলায়। এতেই বোঝা যায় ভারতীয় দল কতটা শক্তিশালী। 

[আরও পড়ুন: পাক মহারণের আগে দুর্দান্ত ছন্দে টিম ইন্ডিয়া, প্রস্তুতি ম্যাচে অজিদের হেলায় হারালেন রোহিতরা]

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেবারও ভারতের কাছে হেরে গিয়েছিল ইমরানের দল। কিন্তু একসময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হলে ভারতই তো চুপসে যেত।

কানেরিয়া: সেটাই তো বলছি। বিশ্বকাপ ছাড়া অন্য টুর্নামেন্টেও ভারতকে হারিয়েছে পাকিস্তান। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভারত হেরে গিয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। কিন্তু বিশ্বকাপে দেখা হলেই বারবার হেরে যায় পাকিস্তান। আমরাও বহুবার এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু কারণটা খুঁজে বের করতে পারিনি। এখনও পর্যন্ত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ৫-০ এগিয়ে রয়েছে। এবার অনেকেই বলছেন ৫-১ হতে পারে। পাকিস্তানের অনেক বিজনেসম্যান ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখে দিয়েছেন পিসিবি-কে (Pakistan Cricket Board)। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। ভারতকে হারাতে এবার মরিয়া পাকিস্তান। তবে এত আগে অবশ্য খেলার ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। নির্দিষ্ট দিন যে দল ভাল খেলবে, সেই জিতবে।  

শোয়েব আখতার, ইউনিস খানের সঙ্গে কানেরিয়া।

বিশ্বকাপে নামার আগে ভারতের সব ক্রিকেটাররাই আইপিএল খেলেছে। পাকিস্তানের কোনও ক্রিকেটারই কিন্তু এরকম মানের টুর্নামেন্ট খেলেননি। আইপিএল কিছুটা হলেও কি সাহায্য করবে ভারতকে?

কানেরিয়া: অবশ্যই। দুনিয়ার সব থেকে বড় টুর্নামেন্ট আইপিএল। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব তারকারা খেলেন আইপিএলে। প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিকাঠামো, ট্রেনিং ফেসিলিটি দারুণ। কোহলি, রোহিতরা আইপিএল খেলেই নামছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ফলে ওরা খেলার মধ্যেই রয়েছে। তার উপরে আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব এবার হয়েছে আমিরশাহীতে। ফলে পরিবেশ, পরিস্থিতি চেনা ভারতের। এটা অবশ্যই ভারতের জন্য ইতিবাচক দিক। অন্য দিকে পাকিস্তান পিএসএল খেলেছে ঠিকই। কিন্তু পিএসএল ও আইপিএলের মান এক নয়। পিএসএলে সেরকম নামী ক্রিকেটাররা খেলে না। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলের মতো ক্রিকেটাররা খেললেও মান দারুণ কিছু একটা নয়।

নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড খেলতে চাইল না পাকিস্তানে। এটা তো বিরাট ধাক্কা বলতে হবে। 

কানেরিয়া: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেললে ভাল জায়গাতেই থাকত পাকিস্তান। সিরিজ না হওয়ার জন্য পিসিবির আধিকারিকদের অনেকেই দায়ী করছেন। এহসান মানি, ওয়াসিম খান দায়িত্ব ছাড়েন। ওয়াসিম খানের সঙ্গে লন্ডনের যোগাযোগ ভাল। প্রশ্ন ওঠে, কেন ইংল্যান্ডকে রাজি করানো গেল না। মুখ পুড়ল পাকিস্তানেরই। মিসবা উল হক, ওয়াকার ইউনিস কোচ ছিল। বিশ্বকাপের দিন কয়েক আগে ওরা দায়িত্ব ছেড়ে দিল। একটা দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারল না পাকিস্তানকে।

খবরে বেরিয়েছে বিশ্বকাপের দল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না বাবর আজম। অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলেছিলেন।

কানেরিয়া: বাবর আজমকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান। অনেক দিন পরে এরকম একজন ক্রিকেটার এসেছে। দল গঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ভুল কিছু করেনি বাবর আজম। ক্যাপ্টেনকেই তো দল পরিচালনা করতে হয়। নিজের পছন্দের টিম না পেলে যে কোনও ক্যাপ্টেনই অসন্তুষ্ট হবে। বাবর আজমও তাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। পাক ক্রিকেটে স্বজনপোষণ তুঙ্গে। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের ছেলেদের দলে ঢোকানোর চেষ্টা চলে। দল খারাপ পারফরম্যান্স করলেই বদলে ফেলা হয় টিম। এখনকার দলটা আগের থেকে ভাল হয়েছে। 

[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ভারতের ষষ্ঠ বোলার বিরাট নিজে? হার্দিকের ফিটনেস নিয়েও আপডেট দিলেন রোহিত]

হেডেন, ফিল্যান্ডার পাকিস্তান ক্রিকেটের দায়িত্বে এসেছেন। সাকলিন মুস্তাক অন্তর্বর্তী কোচ। ফলে চাপটা তো এখন নতুন কোচদের উপরেও।

কানেরিয়া: সে তো বটেই। হেডেন, ফিল্যান্ডার সদ্য দায়িত্ব নিয়েছে। এখনই ওদের কাছ থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা উচিত নয়। ব্যর্থ হলে ‘গেল গেল’ রব উঠবে। রামিজ ভাই এখন দায়িত্বে এসেছেন পিসিবি-র। ভাল কাজ করছেন। নিজে খেলেছেন, ক্যাপ্টেন ছিলেন, ক্রিকেটমহলে সম্মানিত একজন। আশা রাখি রামিজ ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াবে পাকিস্তানের ক্রিকেট। 

খেলোয়াড় জীবনেও বিতর্ক তাড়া করেছে কানেরিয়াকে।

বিরাট কোহলি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি টি টোয়েন্টিতে আর নেতৃত্ব দেবেন না। শোনা যাচ্ছে রোহিত শর্মার হাতে হয়তো অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড উঠবে। ভারতের জন্যও কি এটা অস্বস্তিজনক ব্যাপার নয়? বিশ্বকাপের পরেও তো এসব ব্যাপার প্রকাশ্যে আসতে পারত?

কানেরিয়া: এই সব ঘটনার প্রভাব পড়বে না বলেই আমার মনে হয়। বিশ্বকাপের ঠিক আগে যদি ঘটত, তাহলে বলতাম সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কোহলি তো অনেক আগেই বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছে। আর এতে ওর নিজের ভাল হল। রান পাচ্ছিল না। নেতৃত্বের চাপ বাড়ছিল। এবার অনেকটাই চাপ কমিয়ে নিজের খেলায় মন দিতে পারবে কোহলি। আপনি বলছেন রোহিত শর্মা নেতৃত্ব দেবে। তবে রোহিত তো বলেই দিয়েছে কেএল রাহুলের মতো কারওর হাতে দায়িত্ব দিতে হবে। এতে ভারতেরই সুবিধা হবে। তরুণ একজনকে দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে অভিজ্ঞ করে তোলা হবে। রবি শাস্ত্রীর পরে রাহুল দ্রাবিড় কোচ হবে ভারতের। দারুণ পদক্ষেপ। বলতে বাধ্য হচ্ছি, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এরকম ধরনের চিন্তাভাবনা করতেই পারে না।

মহেন্দ্র সিং ধোনিকে মেন্টর করা হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মেন্টর ধোনি পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন?

কানেরিয়া: অবশ্যই। মহেন্দ্র সিং ধোনি সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই। গতবার চেন্নাই সুপার কিংস কিছু করতে পারল না। এবার দেখুন, ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। ধোনি এমন একজন ক্রিকেটার, যে শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকে। হারতে চায় না ধোনি। আম্পায়ার যদি ম্যাচ বাতিল করে দেন, তাহলে অন্য কথা। ধোনি শেষ বল পর্যন্ত জেতার আশা জিইয়ে রাখে। দারুণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ক্রিকেটার। ওকে দলে পেলে সবার আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য। মাঠে নেমে ধোনি না খেললেও সাজঘরে বসেই ছেলেদের টোটকা দেবে। ধোনির উপস্থিতি ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। 

খেলা ছাড়ার পরেও তাঁকে নিয়ে বিতর্ক হয়।

পাকিস্তানেও তো দুর্দান্ত সব ক্রিকেট মস্তিষ্ক রয়েছে। এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতেই পারত পিসিবি।

কানেরিয়া: কী বলব বলুন! পাকিস্তানের কেউ যদি কোচ হয়, তাহলে অবধারিত ভাবে স্বজনপোষণ হবেই হবে। একমাত্র বব উলমার দারুণ কাজ করেছিলেন। উলমারের পর সেরকম কাউকে আর দেখলাম না।

ইমরান খান জোর দিতেন বোলিং শক্তির উপরে। এই পাকিস্তান দলে ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতার, সাকলিন মুস্তাকের মতো বোলার কোথায়?

কানেরিয়া: এটাই তো সমস্যার জায়গা। পাকিস্তানের বোলিং শাহিন আফ্রিদির উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। শাহিন আফ্রিদিকে সাহায্য করতে পারে হাসান আলি। আরও বোলার আছে, তবে এই দু’জন ছাড়া ভাল মানের বোলার আর কোথায় পাকিস্তানে। অন্য দলগুলো যেখানে প্রথম একাদশ স্থির করে ফেলছে, পাকিস্তানের প্রথম একাদশ কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।

রবিবার তাহলে ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন?

কানেরিয়া: ভারত এগিয়ে। অভিজ্ঞতা, তারুণ্যের দুর্দান্ত মিশেল রয়েছে দলে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ, ইশান কিষান, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্যর মতো ক্রিকেটার রয়েছে। ভারতের হাতে অপশন অনেক বেশি। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করলে একরকম। কিন্তু রান তাড়া করায় দুর্বলতা রয়েছে এই দলের। ১৮০ বা তার বেশি রান তাড়া করতে নামলে পাকিস্তান পারবে না। তবে আবারও বলছি, ম্যাচের দিন যে দল ভাল খেলবে, সেই দলই জিতবে। 

[আরও পড়ুন: নামী ডিজাইনার নন, চলতি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের জার্সি ডিজাইন করেছে এই খুদে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement