সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০১ থাকে ২০২১। টানা ২০ বছর ধরে পশ্চিমী শক্তির প্রশিক্ষণে তিলে তিলে গড়ে ওঠা আফগানিস্তান সেনাবাহিনী (Afghanistan Force) দেশের সংকটের সময়ে কিন্তু যুঝতেই পারল না। তাই তো মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে প্রায় হেসেখেলেই গোটা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে ফেলল তালিবান (Taliban) বাহিনী। ২০ বছরের প্রশিক্ষণ এত ঠুনকো? গলদটা ছিল কোথায়? ‘কাবুলিওয়ালা’র দেশের সেনাবাহিনী যেভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলল, তাতে এখন এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে। নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেসব কিন্তু কম আকর্ষক নয়।
আফগান সেনাবাহিনীকে জঙ্গিবাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তসবল করে তুলতে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়েছিল মার্কিন ফৌজ এবং NATO। নিঃসন্দেহে সেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র। কিন্তু সেসব প্রয়োগে কতটা দক্ষ হয়ে উঠেছিল আফগান সেনা? সেই প্রশ্ন থাকে। কারণ, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আফগানিস্তান(Afghanistan) দাপিয়ে বেড়ানো তালিবানদের রুখতে পালটা প্রতিরোধের প্রাচীর গড়তেই পারল না আশরাফ ঘানির সেনা। সেই ব্যর্থতার দৃশ্য দেখে মনে হয়, অস্ত্র হাতে এলেও কার্যকালে তা চালাতে ততটা দড় নয় সেনা। তুলনায় নানা অস্ত্রপ্রশিক্ষণে এগিয়েছে জঙ্গিরা। ফলে যা হওয়ার তাই। সহজেই জঙ্গিবাহিনীর কাছে মাথা নুইয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়তে হয়েছে তাদের।
এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস তাওয়াকোলি ছিলেন ২১৭ নং আফগান সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বে। তাঁর সেনাঘাঁটি মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই দখল করে নিয়েছে বলে খবর। তিনি বলছেন, ”আমরা খুব দ্রুত পরাস্ত হয়েছি। প্রকৃত যুদ্ধে আমরা হারিনি, এটা অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধে হার। জঙ্গিরা যেভাবে একের পর এক এলাকা দখল করে নিয়েছে, তাতে আমার ধারণা, পার্লামেন্টের বেশ কিছু সদস্যই তাদের মদত দিয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীকে উজ্জীবিত করার বদলে তাদের আপাত নিষ্ক্রিয়তা নিঃসন্দেহে সেনাদের মনোবল খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে।”
[আরও পডুন: ভাঁড়ারে বারুদ আছে, ভাত নেই! তালিবানি রাজত্বে অনাহারের মুখে প্রায় দেড় কোটি আফগান]
কান্দাহারের এক পুলিশ আধিকারিক, আবদুল্লাইয়ের কথায়, ”ওরা (তালিবান) আমাদের পুরো শেষ করে দিতে চায়। ২০০১ সাল থেকে অন্তত ৬০ হাজার পুলিশকে খুন হতে হয়েছে। তবে এর জন্য আমাদের সরকার খানিকটা দায়ী। তালিবানের যেসব শক্ত ঘাঁটি ছিল, তা সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রণে সেই পরিকল্পনা ছিল না।” আফগানিস্তানের পাইলটদের একাংশের বক্তব্য, তালিবান যখন একের পর এক ঘাঁটি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তখন সেনাকর্তারা ক’টি বিমান ধ্বংস হল তা গুনছেন। একত্রিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ তখনও দেখা যায়নি।
[আরও পডুন: ‘এতটুকু বদলায়নি Taliban, মৃত্যুর প্রহর গুনছি’, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন আফগান তরুণী]
মার্কিন সেনার প্রশিক্ষণেও গলদ ছিল। যার মূল সমস্যা ভাষাগত, মানসিকতার তফাত। কাবুলে মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার পর থেকে তাঁদের খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব পড়েছিল আফগানিস্তানের সেনার উপর। বস্তা বস্তা আলু আমদানি হত সেনা শিবিরগুলোতে। স্রেফ ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’ খেয়েই দিন কাটত তাঁদের। যাতে অভ্যস্ত ছিল না আফগান সেনা। দিনরাত স্বল্প বিশ্রাম, পশ্চিমী ধরনের খাবার খেয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ (Arms Training) নিয়ে উৎসাহ হারাচ্ছিল সেনা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশিক্ষণ সঠিকভাবে নিতে পারেনি। তার উপর মার্কিন সেনা, ন্যাটোর আগ্রাসন মোটেই মেনে নিতে পারেনি সেনাবাহিনীর একাংশ। সবমিলিয়ে আফগান সেনাবাহিনীর ২০ বছরে যা পাওয়ার ছিল, যতটা প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল, সেই প্রত্যাশিত ফলাফল হয়নি। তার জেরেই এত দ্রুত পতন তাদের।