শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: এক জনের বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। আর এক জনের বয়স সবে ৭০ পেরিয়েছে। এই দুই বৃদ্ধের কাঁধে চড়েই ভোট বৈতরণী পার হতে চান ঘাটাল লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী বাংলা অভিনয় জগতের সুপার স্টার দেব। আর এই দুই বৃদ্ধও প্রার্থী দেবকে নিয়ে লোকসভার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। আজ ঘাটাল তো কাল সবং। ঠিক পরদিন পিংলা তো তার পরের দিন ডেবরা। পাঁশকুড়া থেকে কেশপুর ছুটছেন ধুতি পাঞ্জাবি পরা লড়াকু দুই তৃণমূল নেতা সুকুমার পাত্র আর শ্যামপদ পাত্র। দাসপুরের দুই পরিচিত বৃদ্ধ তৃণমূল নেতা চরকির মতো ঘুরছেন। ভোট যুদ্ধে দলের দুই সেনাপতি।
ঘটনাচক্রে পেশাগত জীবনে দুই জনেই ছিলেন শিক্ষক। সুকুমার পাত্র বর্তমানে দাসপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। দলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে দাসপুরের দলের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে। চলতি লোকসভা ভোটের ঘাটাল লোকসভা আসনে এবার তৃণমূল প্রার্থী সুপার স্টার দেব। তাঁর ইলেকশন এজেন্ট হয়েছেন সুকুমারবাবু। ক’দিন আগে ৬৯ পেরিয়ে ৭০-এ পা দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আর বৃদ্ধ শ্যামপদ পাত্র সবে ৭০ পেরিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি শ্যামবাবু তৃণমূল নেত্রীর ‘শ্যামদা’ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা। এক সময় ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি। তিনি হয়েছেন দেবের প্রচার কমিটির সভাপতি। ভোট যুদ্ধে দেবের এই দুই বৃদ্ধ সেনাপতি জেট গতিতে ছুটে চলেছেন ঘাটাল লোকসভার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। দেব কোথায় কোন দিন কীভাবে প্রচার করবেন, রোড শো-ই বা হবে কেমন, প্রচারের ধরনই বা কেমন তা ঠিক করবেন শ্যামবাবু। আর কোন বুথে কে পোলিং এজেন্ট হবেন, কোন বিধানসভা এলাকায় সংগঠন কেমন, কী করলে তার সমাধান হবে, বিরোধী পক্ষের মেকাবিলা কেমনভাবে হবে তা সামলাবেন সুকুমারবাবু।
ঘাটাল লোকসভা আসনের সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রেই একবার করে ঘোরা হয়ে গিয়েছে দুই সেনাপতির। এক কথায় গোটা লোকসভা এলাকায় হাজার হাজার তৃণমূল সৈনিকের কমান্ডার ইন চিফ এই দুই বৃদ্ধ। কী বলছেন ইলেকশন এজেন্ট সুকুমারবাবু? তিনি বলেন, “ দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমার দায়িত্বটুকু নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছি মাত্র। দেব দলের প্রার্থী। তাঁকে জিতিয়ে আনা আমাদের সকলের কর্তব্য। আমি ইতিমধ্যে সবকটি বিধানসভা এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে সভা করে এসেছি। করণীয় কর্তব্য কী তাও কর্মীদের জানিয়ে এসেছি। সেই মতো কাজ চলছে। আবার যাব।” আর প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান শ্যামপদবাবু বলেন, “দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে দলের বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমি সেই কাজটুকু করছি। প্রচারে শালীনতা বজায় রেখে কর্মীদের কিভাবে প্রচার করতে হবে তা নিয়ে আমরা একাধিকবার কর্মশালা করেছি। আবারও করব। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে পোষ্টার, হোর্ডিং, প্রচারপত্র, পথসভা, জনসভা, রোড শো সবেরই পরিকল্পনা নেওয়া চলছে। ”
প্রতিটি সভাতেই দেবের পাশে বসে জন সমর্থনের গভীরতা মেপে নিচ্ছেন দুই প্রবীণ তৃণমূল নেতা। তরুণদের বাদ দিয়ে দুই বৃদ্ধের কাঁধে এতবড় দায়িত্ব কেন? জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “ওঁদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাই আমাদের সম্পদ। ওঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের শিক্ষিত করে তুলবেন। তাই আমরা অনেক ভেবেচিন্তে দুই প্রবীণ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছি।”
ছবি : সুকান্ত চক্রবর্তী
The post ভোটযুদ্ধে এবার ঘাটালে এই দুই বৃদ্ধই ‘দেব সেনাপতি’ appeared first on Sangbad Pratidin.
