নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মেরুকরণকে (Polarization) জোরদার করতে এবার ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ অস্ত্রে শান দিচ্ছে বিজেপি (BJP)। আগামী লোকসভায় মেরুকরণের হাওয়ায় ভর করে ভোট বৈতরণী পার হওয়াই লক্ষ্য। ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণা করা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দীর্ঘদিনের দাবি। সেটাই পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির পক্ষে এই মুহূর্তে সরাসরি হিন্দু রাষ্ট্রের (Hindu Rashtra) দাবিকে সামনে রেখে মাঠে নামার ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে। তাই ঘুরপথে হিন্দু রাষ্ট্র নিয়ে জনমত সংগ্রহ, বলা ভাল, জল মাপার কাজ শুরু করতে চলেছে পদ্ম ব্রিগেড। যার পরীক্ষাগার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানাকে।
গত শনিবার, ১৯ নভেম্বর থেকে হরিয়ানার (Haryana) ধর্মনগরী হিসেবে বিখ্যাত কুরুক্ষেত্রে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গীতা মহোৎসবকে সামনে রেখে সেখানে হিন্দু রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে আলোচনার রাস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছে বলেই খবর। ৩০ নভেম্বর কুরুক্ষেত্রে ‘জাতীয় হিন্দু রাষ্ট্র’ অধিবেশন হতে চলেছে। এই মর্মে পুরীর শংকরাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর ছবি দিয়ে দেশের সর্বত্র প্রচারও শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা তো সেখানে হাজির থাকবেনই। সূত্রের খবর, সেদিনের অনুষ্ঠানে বিজেপির প্রথম সারির বেশ কিছু নেতার উপস্থিতির সম্ভাবনাও প্রবল। সম্মেলনের মূল বক্তা পুরীর শংকরাচার্য। যিনি ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবিতে প্রকাশ্যেই বহুবার সোচ্চার হয়েছেন। কুরুক্ষেত্রে গীতা মহোৎসবের আড়ালে যে হিন্দু রাষ্ট্র নিয়ে প্রচারের রূপরেখা তৈরি হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল।
[আরও পড়ুন: ‘২০২৪ সালের আগেই লাগু হবে CAA’, দাবি শান্তনু ঠাকুরের, পালটা দিলেন মমতাবালা]
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার আসার পর থেকে সংঘ পরিবারের দীর্ঘদিনের বেশ কিছু দাবি একে একে পূরণ করতে শুরু করেছে বিজেপি। যার মধ্যে রামমন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি, তিন তালাক রদের মতো বিষয় রয়েছে। বাকি থাকা ইচ্ছেগুলির মধ্যে রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সর্বোপরি বা প্রধান দাবি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা। বাকি দু’টি দাবি পূরণের ক্ষেত্রে সংসদে বিল এনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ শুরু করার রাস্তা খোলা রয়েছে।
কিন্তু হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তার সঙ্গে আরও অনেক সামাজিক বিষয়ও জড়িত রয়েছে। তাই তাড়াহুড়ো করে এই রাস্তায় এখনই হাঁটতে চাইছে না বিজেপি। আবার বিষয়টিকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতেও তাদের অনীহা। তাই এই ভাবেই ঘুরপথে হিন্দু রাষ্ট্রের দাবিকে জিইয়ে রেখে ভবিষ্যতের অঙ্ক কষতে শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল।
[আরও পড়ুন: ভোটের সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ‘না’, গুজরাট নির্বাচনে আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ কমিশনের]
এদিকে, গীতা মহোৎসব নিয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর সরকারের মরিয়া মনোভাব ইতিমধ্যেই টের পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই কুরুক্ষেত্রে আসার জন্য রাজ্য সরকারের বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কম করে দেওয়া হয়েছে। ২৯ নভেম্বর গীতা মহোৎসবে যোগ দেওয়ার কথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর।