সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনেকগুলি অনুমান মিলিয়ে তৈরি হয় প্রমাণ। রাজনীতির মাঠেও এই সূত্র খাটে। মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর ঘটনা পরম্পরা মিলিয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছেন আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী বছর দিল্লিতেও রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ঝাড়খণ্ডে বয়ে চলা হেমন্তের বাতাসে যথেষ্ট চনমনে কেজরি। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন অঙ্ক অনেকখানি মিলে গিয়েছে। শেষটুকু কষতেও খুব বিশেষ অসুবিধা হবে না।
মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড দেশের দুই বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল 'ড্র'। ইন্ডিয়া শিবিরের দখলে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্র গিয়েছে এনডিএ-এর দখলে। এরই মাঝে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আগামী বছর দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের। তার আগে এই দুই বিধানসভা নির্বাচনের ফলে আশার আলো দেখছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কারণটা অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অস্ত্রে দুই রাজ্যে জয়ের স্বাদ চেখেছে দুই শিবির। সেই সব অস্ত্র গোছানো রয়েছে মাফলার ম্যানের আস্তিনে। ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের পিছনে অন্যতম বড় কারণ, বিজেপি বিরোধী প্রচার। আরও স্পষ্টভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের 'রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র'। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এজেন্সিকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রচারে বার বার তুলেছে জেএমএম। জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তো বটেই ঝাড়খণ্ডে হেমন্তের প্রত্যাবর্তনের পিছনে এটা অন্যতম বড় কারণ। জমি দুর্নীতি মামলায় হেমন্তের জেলযাত্রা ও জামিনে মুক্তি সহানুভুতি আদায় করে নিয়েছে ঝাড়খণ্ডবাসীর।
এই ঘটনায় আশ্চর্যজনক মিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। দিল্লিতেও আবগারি দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নাগপাশে বন্দী হয়েছিলেন কেজরি ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা। যদিও সে সব কাটিয়ে বর্তমানে মুক্ত 'মাফলার ম্যান'। জেল থেকে বেরিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে এই সহানুভুতির ফুল দিল্লিতেও ঝড়ে পড়তে পারে বলে আশা করছে আপ নেতৃত্ব। এর সঙ্গেই রয়েছে আপের সবচেয়ে বড় অস্ত্র জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প। ঝাড়খণ্ড তো বটেই এই অস্ত্রে মহারাষ্ট্রে বাজিমাত করেছে মহাজুটি। মহারাষ্ট্রে 'লডলি বহেন' ও ঝাড়খণ্ডে 'মাইয়া যোজনা' এই দুই প্রকল্প দুই রাজ্যের নির্বাচনে অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে মনে করা হয়। এখানে বাকিদের তুলনায় ঝুলি অনেক বেশি ভারি কেজরিওয়ালের।
২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লিতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল পরিষেবা দিয়ে কংগ্রেসকে হঠিয়েছিল আপ। এর পর একে একে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। এ ছাড়াও মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং বয়স্কদের জন্য তীর্থযাএা প্রকল্প আনে আপ। এখানেই অবশ্য খান্ত থাকেননি কেজরিওয়াল, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহিলাদের জন্য ১০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সব মিলিয়ে যে দুই মন্ত্র দুই রাজ্যে জয়ের কাণ্ডারি হয়ে উঠেছে, সেই সহানুভুতি ও বিনামূল্যে পরিষেবার অঙ্ক কষে দিল্লির নির্বাচনে জয়ের সামিয়ানা বাঁধতে চলেছেন কেজরিওয়াল।