বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: এপ্রিলের শুরুতে তাপমাত্রার দাপটে উত্তরের চা বলয়ে পোকার উপদ্রব বেড়ে পাতা ঝলসে রীতিমতো মহামারী শুরু হয়। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই শুক্রবার থেকে দু’দিনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় তিন হাজার একর ছোট চা বাগান। শিলের আঘাতে কুড়ি সহ দু’টি পাতা ছিড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। শুধু যে শিলাবৃষ্টিতে বাগানের ক্ষতি হয়েছে সেটাই নয়। ঝড়ে ছায়া গাছ ভেঙেছে। শ্রমিকদের বাড়ির চাল উড়েছে। সেকেন্ড ফ্লাশের মধ্যে বাগানের ওই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে শতাধিক চা চাষির।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এই ধাক্কা সামলে ওঠা চাষিদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। শিলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চা গাছের পাতা দিতে অনেক সময় লাগবে। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব করে চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চা পর্ষদের কাছে আবেদন জানানো হবে।” ক্ষুদ্র চা চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাহাদুর, রাজগঞ্জ ব্লকের বেলাকোবা, পানিকৌড়ি, ময়নাগুড়ি ব্লকের পানবাড়ি, রামশাই, কালামাটি, মালবাজার মহকুমার লাটাগুড়ি, রাজাডাঙা, ক্রান্তি এলাকায়। একশো পনেরোজন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮০ জন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। রামশাই এলাকার চা চাষি মানিক সরকার জানান, মার্চে ছিল একটানা বৃষ্টির বিপদ। সেই রেশ না কাটতেই এপ্রিলের শুরুতে তাপমাত্রার দাপাদাপিতে দিশাহারা দশা হয়। বিঘার পর বিঘা জমির চা গাছের পাতা সবুজ হারিয়ে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। বাড়ে ‘রেড স্পাইডার’-এর হামলা। দোসর হয় রাক্ষুসে ‘সবুজখেকো’ পোকা লুপার। কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা এবং ওষুধ স্প্রে করে ওই বিপদ সামলে না উঠতে শিলাবৃষ্টির ধাক্কা। রাজাডাঙার চা চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “মরার উপরে খাড়ার ঘায়ের মতো পরিস্থিতি হয়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে সেকেন্ড ফ্লাশের পাতা তোলা শুরু করার কথা ছিল। সম্ভব হয়নি। বুঝতে পারছি না কেমন করে পরিস্থিতি সামাল দেব।”
[আরও পড়ুন: সাক্ষাৎকার দিয়ে ‘সুপ্রিম’ নজরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, দাবি অভিষেকের]
টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চা গাছ থেকে পাতা মিলতে সময় লাগবে। সংস্থার গবেষক তৃণা মন্ডল জানান, প্রথমে শীতে অনাবৃষ্টি। এরপর মার্চ মাসে একটানা অতিবৃষ্টির জেরে ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ চা পাতা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশা ছিল এপ্রিলে ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’-এর উৎপাদন ভালো হবে। কিন্তু শিলাবৃষ্টি অনেক চা চাষির সেই স্বপ্ন মুছে দিল। বাগানের এই ক্ষতি সামাল দিতে সময় লাগবে।