shono
Advertisement

করোনা কালে ক্লাস করাতে ‘দুয়ারে স্কুল’, জামুড়িয়ায় পড়াচ্ছেন ‘রাস্তার মাস্টার’

গ্রামজুড়েই আঁকিবুকি আর ব্ল্যাকবোর্ডে “দুয়ারে শিক্ষা”র ব্যবস্থা আদিবাসী গ্রামে।
Posted: 09:17 PM Sep 04, 2021Updated: 09:17 PM Sep 04, 2021

শেখর চন্দ্র, আসানসোল: করোনার (Covid-19) জেরে স্কুল বন্ধ। কিন্তু “দুয়ারে স্কুলে”র ব্যবস্থা করেছেন রাস্তার মাস্টার মশাই দ্বীপনারায়ণ নায়েক। সেখানেই চলছে আদিবাসী ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা। পাড়ার কাঁচা বাড়ি হোক বা মন্দির বা ভাঙা দেওয়াল- গ্রাম জুড়েই স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ বা নামতার আঁকিবুকি চোখে পড়বেই। শুধু পড়ুয়ারা নয় নিরক্ষর অভিভাবকরাও সেখানে পড়াশোনা করেন।

Advertisement

গত দু বছর ধরে করোনার জেরে স্কুল বন্ধ। স্কুলে নেই শিক্ষকদের আনাগোনা। নেই পড়ুয়াদের যাতায়াত। পঠন-পাঠন বন্ধ। কিন্তু রাস্তায় পাড়ায় পাড়ায় বন্ধ হয়নি পঠন পাঠন। একক উদ্যোগে আদিবাসী ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলে মেয়েদের পঠন পাঠন করাচ্ছেন তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বীপনারায়ণ নায়েক। গত দুবছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় তিনি পড়াশুনা করান বলে তিনি “রাস্তার মাস্টার” নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

[আরও পড়ুন: খোদ ‘মা লক্ষ্মী’ বিলি করলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম! আপ্লুত গ্রামবাসীরা]

জামুড়িয়ার জবা গ্রামে আট পাড়াতে গেলে চোখে পড়বে, কেউ বসে একমনে পড়ছে, কেউ লিখছে, কেউ ছবি আঁকছে কিন্তু তাদের কারোর কাছে বই নেই, নেই কোনও খাতা-পেন এমনকি নিজস্ব কোনো স্লেট পেনসিল। তাহলে তারা লিখছে কোথায়? এরা প্রত্যেকেই লেখাপড়া করছে তাদের কাঁচা মাটির দেওয়ালে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় বর্তমানে যাদের সামান্য পেন -খাতা কেনার সামর্থ্যটুকুও নেই কিন্তু আছে ‘শিক্ষার অধিকার’। তাদেরকেই সেই অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাস্তার মাস্টার তাদের কাঁচা বাড়ির ভগ্নপ্রায় দেওয়ালগুলিতে পাকা রং করে সেগুলিকে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। সুপরিকল্পিত উপায়ে তৈরি করেছেন বহু ব্ল্যাকবোর্ড। লিখেছেন বর্ণপরিচয়, আলফাবেট থেকে শুরু করে করোনা থেকে বাঁচার উপায়, এমনকি ভ্যাকসিনের গুরুত্বের কথা একইসঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন। এর ফলে একদিকে যেমন আদিবাসী সমাজের ছাত্রছাত্রীরা “দুয়ারে শিক্ষা” বলুন বা “দুয়ারে স্কুল” পাচ্ছে। অন্যদিকে, তেমনি আদিবাসী মানুষদের মধ্যেও শিক্ষা সচেতনতা গড়ে উঠছে।

চলছে পড়াশোনা

 

এর পাশাপাশি তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সমস্ত কুসংস্কার আছে সেগুলো দূর করার জন্য ‘বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে’ বিশেষ পদক্ষেপ করেছেন। আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের ফুলের পরাগ থেকে শুরু করে ম্যালেরিয়ার জীবাণু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করান। ফলস্বরূপ ছাত্রছাত্রীরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে ম্যালেরিয়া একটি জীবাণু ঘটিত রোগ। এটি কোন “ভূতে ধরা” বা “দূষিত বাতাস” ঘটিত রোগ নয়। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে দ্বীপনারায়ণ বাবু ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জীবন ও আদর্শকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরেছেন কয়েকদিন আগে।

[আরও পড়ুন: Mustard Oil: ডবল সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে সরষের তেল, দামের ঝাঁজে চোখে জল মধ্যবিত্তর]

এই প্রসঙ্গে দ্বীপনারায়ণ বাবু বলেন, এখানকার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার অর্থাৎ তাদের অভিবাবকরা তেমনভাবে কেউই প্রথাগত শিক্ষা নেয়নি। তাই এখানে তিনি শিক্ষা বিস্তার ‘শূন্য’ থেকে শুরু করেছেন। একইরকমভাবে বিজ্ঞান সচেতনতাও শূন্য থেকে শুরু করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি সমাজের সমস্ত কুসংস্কারকে দূর করে “শূন্যে” নামিয়ে আনবেন ও সেইসঙ্গে স্কুল ছুট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনবেন।

রাস্তার মাস্টারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে করেছেন জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং। তিনি বলেন, মাস্টারমশাই যেভাবে কুসংস্কার দূরীকরণ ও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে কাজ করছেন তা প্রশংসনীয়। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী পায়েল মুর্মু, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রিয়া টুডু ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মন্দিরা ওরাং ‘দুয়ারের শিক্ষা’ পেয়ে অত্যন্ত খুশি। তাঁরা বলেন, “আমরা ১৮ মাসের বেশি সময় স্কুলে যাইনি কিন্তু স্যারের এখানে পড়লে মনে হয় আমরা যেন স্কুলেই পড়াশোনা করছি, এখানে পড়তে বেশ ভাল লাগে।” অভিভাবক চুমকি মুর্মু, শীতল বাস্কি মাইক্রোস্কোপের নিচে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুকে দেখে অবাক হয়ে বলেন, “ও এতদিনে বুঝলাম জ্বরে কাঁপুনিটা একটা রোগ, ভূতে ধরা নয়।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement