shono
Advertisement

Breaking News

‘চোরের মায়ের বড় গলা’, একাধিক নমুনায় সিপিএমের ‘স্বচ্ছ’ নিয়োগের পর্দাফাঁস

প্রকাশ্যে নয়ের দশকের একাধিক নিয়োগ দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।
Posted: 12:19 PM Jun 06, 2023Updated: 12:19 PM Jun 06, 2023

বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগের পিছনে আসল খেলার পর্দাফাঁস একটি অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদন। লিখছেন অরূপ চক্রবর্তী

Advertisement

ইদানীং নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা সামনে আসার পর হঠাৎই সিপিএম (CPM) আমলের সমস্ত নিয়োগ স্বচ্ছ নিয়োগ হত, এরকম একটি সোনার পাথরবাটি মার্কা কথা বাঙালিকে জোর করে গেলানো হচ্ছে। নয়ের দশক বা তার কিছু আগে থেকে যাঁরা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁরাও দেখতে দেখতে চোখ সয়ে যাওয়ায় মিটিমিটি হাসছেন। আর মনে মনে বলছেন “আস্তে কইয়েন কর্তা, শুনলে ঘোড়ায়ও হাসব।” আসলে কীভাবে হত সেই সময়ে ‘স্বচ্ছ নিয়োগ!’ তারই সামান্য কিছু নমুনা পেশ করা হল।

আমরা সামাজিক মাধ্যমে কিছুদিন আগে কয়েকটি স্কোরশিটের ছবি পাই হুগলি জেলার একটি বিদ্যালয়ে নয়ের দশকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত, তারপর সেই বিষয়ে বিশদে খোঁজ করতেই অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে, নয়ের দশকে হুগলি জেলার ডুমুরদহ ধ্রুবানন্দ হাই স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে একাধিক দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য, যার মধ্যে অন্যতম নাম শ্রী রামপ্রসাদ হালদার, যিনি এবং তাঁর পরিবার তৎকালীন বাম জমানায় বলাগড় ব্লক শাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন। বর্তমানে তিনি এবিটিএ-র হুগলি সদরের সভাপতি ও রাজ্য কমিটির সদস্য। সিপিএমের বলাগড়ের এরিয়া কমিটির সদস্য। তাঁর ভাই শ্যামাপ্রসাদ হালদার সিপিএম দলের সর্বক্ষণের কর্মী, বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা ও বর্তমানে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য। মিটিং-মিছিলে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে খুব সরব। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের পোস্ট জ্বলজ্বল করছে, ‘স্বচ্ছ নিয়োগ ও যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি চাই।’ সবাই খুব বাহবাও দিচ্ছেন। আশা করি এই প্রতিবেদন পড়ার পর এই নিয়োগগুলি নিয়েও রামপ্রসাদবাবুরা একইভাবে সরব থাকবেন।

[আরও পড়ুন: বাড়িতে ধরা পড়ল চোর, ‘রাতের অতিথি’কে গণধোলাই থেকে বাঁচাতে পাহারায় চিকিৎসক]

১৯৯৬ সালে হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের অন্তর্গত ডুমুরদহ ধ্রুবানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি বাংলা অনার্স এসসি (তফসিলি জাতির জন্য) সংরক্ষিত পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে ১৪ জনের নাম পাঠানো হয়। অ্যাকাডেমিক স্কোর এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষরিত প্রদত্ত নম্বরের তালিকা অনুযায়ী রামপ্রসাদ হালদারের যা অবস্থান ছিল, তাতে তাঁর নাম প্রথম তিন জনের প্যানেলে ছিল না। কিন্তু সিপিএম দলের কাছে দলীয় আনুগত্য ও স্বার্থের কাছে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ কিছুই ছিল না। তাই নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা না করে রামপ্রসাদবাবুকে ক্লাস ডেমনস্ট্রেশনে ৫(পাঁচ)-এর মধ্যে ৪(চার) এবং মৌখিক ভাইভা ভোসি পরীক্ষাতে ৫-এর মধ্যে ৫ দিয়ে এবং সার্বিকভাবে যিনি প্রথম ছিলেন তাঁকে ২+১=৩ , যিনি দ্বিতীয় ছিলেন তাঁকে ১+১=২, যিনি তৃতীয় ছিলেন, তাঁকে ১+১=২ দিয়ে নতুনভাবে তালিকা তৈরি করা হয়। (সব নথি দেওয়া হল) এই প্রসঙ্গে মনে হতেই পারে যে, রামপ্রসাদবাবু অসাধারণ ইন্টারভিউ দিয়েছেন আর বাকিরা স্কুল-কলেজে ভাল পড়াশোনা করলেও বাস্তবে লেখাপড়া কিছুই জানতেন না। এখানেই শুরু হয় সিপিএমের মেকি সততার খেলা।

ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের দেওয়া নম্বরের ইন্ডিভিজুয়াল স্কোরশিটগুলি উদ্ধার না হলে কিছুতেই খোলা যেত না সিপিএমের এইসব দুর্নীতির মুখোশ। অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন, রেখে যায় তার অপরাধের চিহ্ন। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ইন্ডিভিজুয়াল স্কোরশিটগুলি লক্ষ করলে দেখা যাচ্ছে যে, সেখানে যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ডিআই অফিসে পাঠানো প্যানেলের নম্বরগুলির মধ্যে বিস্তর গরমিল। রামপ্রসাদবাবুকে ঢালাও নম্বর দিলেও তিনি কোনওমতে তিনজনের প্যানেলে যখন আসতে পারছেন না, তখন একেবারে অনৈতিকভাবে যারা সর্বোচ্চ অ‌্যাকাডেমিক স্কোর করছিল তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরগুলিকে যথেচ্ছভাবে কমিয়ে দিয়ে রামপ্রসাদবাবুকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। অথচ সঠিক প্রাপ্ত নম্বরগুলি বিবেচনা করলে রামবাবু কোনওভাবেই তিনজনের প্যানেলে থাকতে পারতেন না।

[আরও পড়ুন: পুরসভা নয়, কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারে রিলায়েন্স, মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় দায়িত্ব বদল]

এখানে শুধু রামপ্রসাদবাবুর নম্বর অনৈতিকভাবে বাড়ানো হয়েছে তাই নয়, অন্যদেরও বঞ্চিত করা হয়েছে প্রাপ্ত নম্বর কমিয়ে দিয়ে। বিশেষভাবে নজরে পড়েছে, যা পড়ে সকলেই বিস্মিত না হয়ে পারবেন না, ১৪ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে রামপ্রসাদ হালদারের প্রাপ্ত নম্বর ১৪ তম স্থানে, অনার্সের নম্বরের ভিত্তিতে তাঁর স্থান ১২তম স্থানে। দুর্নীতির শেষ এখানেই নয়। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত করে তা ডিআই-এর নিকট পাঠাতে হত প্যানেলটি অনুমোদন করার জন্য। রেজুলেশনের সেই কপি দেখলে সকলের চোখ কপালে উঠে যাবে। কারণ, সেই সভার রেজলিউশনে উক্ত সভার সভাপতি কোনও স্বাক্ষর করেননি। তখন সিপিএমের কথায় ‘বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়’।

সিপিএমের নির্দেশে সেই অসম্পূর্ণ (সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া) ও অনৈতিক রেজলিউশনের ভিত্তিতেই তদানীন্তন ডিআই অফিস চোখ বুজে মিথ্যার জাল বুনে তৈরি প্যানেল অনুমোদন করে দেয় এবং রামপ্রসাদবাবু ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে যোগ দেন। এবং বর্তমানে ফেসবুকে তিনি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদ করে বড় বড় পোস্ট করছেন । হুগলির বলাগড়ের মানুষজন অবশ্য রামপ্রসাদবাবুর সেই পোস্ট দেখে বাংলার একটা প্রাচীন প্রবাদ, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র কথা বলে বেড়াচ্ছেন। (চলবে)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement