সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কখনও আবেগপ্রবণ৷ কখনও একেবারেই ঘরোয়া মানুষ৷ আবার তার মধ্যে থেকেই কখনও ঝলক দিয়ে উঠছে তুখোড় এখ কূটনীতিবিদ৷ বিদায়বেলাতেও যিনি শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে এতটুকু নমনীয় নয়৷ বিদায়ী ভাষণে এভাবেই নানা রঙে নিজেকে মেলে ধরলেন বারাক ওবামা৷
মার্কিন ইতিহাসে তিনি নিজেই একটি মাইলফলক৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেদিন তাঁকে নির্বাচিত করেছিল জনতা, সেদিন বিশ্ব ইতিহাসের পাতাতেও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল৷ নিজের কাজেই সে ইতিহাসের সূচনাটি লিখলেন৷ আজ তার শেষ পরিচ্ছেদটি লিখেই যেন ট্রাম্পের জন্য ইতিহাসের পাতাটি উল্টে দিলেন বারাক৷
কী বললেন তাঁর বিদায়ী ভাষণে? শেষবেলাতে মার্কিন জনতাকে শুনিয়ে গেলেন গণতন্ত্রের সারসত্যটি৷ যেখানে মানুষই ক্ষমতার শেষ কথা৷ আর তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনতার প্রতি তাঁর অন্তিম নির্দেশ, নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখা৷ পরিবর্তন আনার ডাক দিয়েই সাধারণ মানুষ তাঁকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছিলেন৷ সে আসন ছাড়ার মুহূর্তে তিনি শুনিয়ে গেলেন পরিবর্তনের নয়া আহ্বান৷ মানুষকে তিনি বললেন পরিবর্তনের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার উপর নয়, মানুষ যেন নিজেদের উপর বিশ্বার রাখেন৷ ইতিহাসের খাতিরেই পদের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবি৷ সে কথা জানিয়েই বললেন, সে পাল্টানোতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ বরং ক্রামগত এই পাল্টাতে থাকাই আমেরিকার শক্তির উস৷
(নোট বাতিলে কে আসলে লাভবান, জানালেন অমর্ত্য সেন)
শেষবেলাতে এক চিলতে আবেগও ছুঁয়ে গেল তাঁর কথাতে৷ ধন্যবাদ দিলেন তাঁর দেশের মানুষকে৷ সার্থক জনপ্রতিনিধির মতোই বললেন, তাঁদের সেবা করতে পেরে তিনি গর্বিত৷ এর ফাঁকেই যেন উঁকি দিয়ে গেল ঘরোয়া এক মানুষ৷ স্ত্রী মিশেলকে তাই বললেন, শুধু প্রেসিডেন্টের পত্নী নন, তিনি তাঁর যথার্থ বন্ধুও বটে৷ যেতে যেতে মার্কিন মুলুকের গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার উপর অনেকখানি জোর দিয়ে গেলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট৷ বললেন, যখনই গণতন্ত্রকে হালকা চালে নেওয়া হয়, তখনই ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে৷ দল মত নির্বিশেষে সকলে যেন এক পরিচয়ে ভাবিত হন যে তাঁরা বৃহত্তর এক দেশের নাগরিক৷ দেশ কত বড়, তা নিয়ে ইন্টারনেটে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করা বৃথা৷ জাতি বিদ্বেষ যে এই গণাতান্ত্রিক পরিসরের সবথেকে বড় শত্রু, তা জানিয়ে যেতে ভুললেন না৷
(খোঁজ মিলছে না প্রতিবাদী জওয়ানের, আতঙ্কে পরিবার)
মার্কিন জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেও, সন্দেহ নেই, তাঁর এই বার্তা গোটা বিশ্বের কাছেই অত্যন্ত জরুরি৷ বিশ শতকের সবথেকে বড় অর্জন হিসেবে মনে করা হয় এই গণতন্ত্রের অনুশীলনকে৷ বিশেষত গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে একটি দেশের যোগ্য হয়ে ওঠাকে৷ আজ বারাক ওবামাও যখন সেই যোগ্য হয়ে ওঠার সওয়াল করলেন, তখন গোটা বিশ্বের কাছে এই শতকের আগামী রূপরেখাটিও যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ আবার এসবের মধ্যেও খোলা তলোয়ার হয়ে ঝলসে উঠলেন৷ যেখানে তিনি তুখোড়া কূটনীতিবিদ৷ সাফ জানিয়ে দিলেন, রাশিয়া ও চিন আমেরিকার বিরাট প্রভাবের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না৷ কিন্তু তা ততক্ষণই যতক্ষণ নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবে আমেরিকা৷ শুধু একটা বড় দেশ নয়৷ যদি অন্যান্য ছোট ছোট দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, তবে শত্রুরা যে চাইলেও কিছু করতে পারবে না সে বার্তা দিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট৷
এই ভাষণের পর বিশ্ব ইতিহাসেও এক নব অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে৷ ট্রাম্পের হাতে আমেরিকা যেদিকে এগোবে, তার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বের রাজনীতিতে৷ প্রভাবিত হবে ছোট ছোট দেশগুলি৷ বদলে বদলে যাবে সম্পর্কের সমীকরণগুলি৷ আর তার আগে এক বৃহত্তর মানবিকতা ও গণতান্ত্রিকতার জানলাটি খুলে দিয়ে গেলেন ওবামা নিজেই৷ সেখান থেকে কতটা আলো পড়বে ভবিষ্যতে, সে তো সময়ই বলবে৷
ইমাম বরকতিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব নেটদুনিয়া
The post গণতন্ত্র, একতার বার্তা দিয়ে বিদায়বেলায় আবেগে ভাসলেন ওবামা appeared first on Sangbad Pratidin.