সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: 'আজব সমস্যায় পড়লাম তো!' মুখ চুন করে মোবাইল স্ক্রিন স্ক্রল করতে করতে কথাটি বললেন কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকা প্রবাসী বাঙালি রনি চট্টোপাধ্যায়। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন মা। এক বছর পালন করতে হবে একাদশী। ওদিকে আবার জরুরী কাজ মিটিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বারাসতের বাড়ি থেকে দিল্লি ফেরার কথা ২৭ বছরের যুবকের। সেদিন একাদশী থাকায় বাইরের খাবার খাবেন না তিনি। বাড়ি থেকেই কিছু একটা বানিয়ে আনার কথা ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। আইআরসিটিসি অ্যাপে টিকিট কাটতে গিয়ে ‘নো ফুড’ অপশনই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যাত্রার দিনক্ষণ যে এদিক-ওদিক করবেন, তারও উপায় নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কাজ নিয়ে যেতে হবে কলকাতা। সেইমতো কাজে ছুটি নেওয়া। তাহলে? এতটা পথ কি পেটে গামছা বেঁধেই যেতে হবে?
এই একটি নয়। এই ধরনের ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে প্রচুর। হঠাৎ করেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আইআরসিটিস-র অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ‘নো ফুড’ অপশন। বিষয়টা ঠিক কী? খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ‘টুকটাক’ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। যার জেরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। কী সেই পরিবর্তন? দিনে দিনে রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো 'এলিট' ট্রেনগুলিতে সরবরাহ করা খাবারের মান ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এসব ট্রেনের যাত্রীরা। অনেকেই দাবি তুলতে থাকেন, গাঁটের কড়ি খসিয়ে নিম্নমানের ওই খাবার খেতে চান না তাঁরা। এই কারণে ২০১৭ সাল থেকে টিকিট কাটার সময় চালু হয় খাওয়ার না নেওয়ার জন্য 'নো ফুড' বিকল্প। এতদিন টিকিট কাটার সময় আমিষ, নিরামিষ খাবারের বিকল্প বাছাই করার পাশাপাশি কেউ চাইলে এই ‘নো ফুড’ অপশনে গিয়েও টিকিট কাটতে পারতেন। সম্প্রতি আবার তাতে জুড়েছিল জৈন সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ খাবারের বিকল্পও। তবে হঠাৎ করেই খাওয়ার বাছাইয়ের তালিকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে সেই বিকল্প!
কেন এই পরিবর্তন? তাহলে কি ইচ্ছা না হলেও ট্রেন সফরে খাবার নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেল? আইআরসিটিসি-তে যোগাযোগ করতে গিয়ে এজিএম হসপিটালিটি বীরেন্দর ভাট্টি জানালেন, “অপশনটা আছে, শুধু ওর জায়গা পরিবর্তন হয়েছে।” তাঁর নির্দেশ মেনে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছুটা নিচে, যেখানে অন্যান্য কিছু বিকল্প বেছে নেওয়ার জায়গা থাকে, অর্থাৎ টিকিটের অটো আপগ্রেডেশন, শুধু কনফার্ম আসন পেলেই টিকিট বুক করা অপশন থাকে, সেখানে খুদে করে রয়েছে খাবার না নেওয়ার বিকল্প।
এখানে অবশ্য আছে আরেক বিপত্তি। এতদিন একই পিএনআর-এর আলাদা যাত্রীদের কেউ চাইলে খাবার নিতে পারতেন, কেউ চাইলে না নিতে পারতেন। এখন সেই বিকল্প নেই। হয় সবাইকেই খাবার নিতে হবে, নাহলে কেউই খাবার পাবেন না। ‘টুকটাক’ বলে দাবি করা হলেও কেন হঠাৎ করে এই ধরনের বড় একটা পরিবর্তন করা হল, তার উত্তর অবশ্য দিলেন না আইআরসিটিসি বা রেলের কোনও কর্তাব্যক্তি।
