চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হওয়াই অপরাধ! তাই ৫ অস্থায়ী কর্মীর রুটিরুজি কেড়ে নিল বিজেপিশাসিত গ্রাম পঞ্চায়েত। এমনই ঘটনা ঘটেছে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। বিরোধী শিবিরের দাবি, কোনওরকম আলোচনা না করে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচজন কর্মীকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজহারা সাফাইকর্মী বলাই জানা, পিয়ন রবীন্দ্রনাথ দাস, পিয়ন সত্যব্রত দাস, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সাথী মণ্ডল এবং অনিমা মণ্ডল অসহায় হয়ে পড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ দাস জানিয়েছেন, “২০০৭ সাল থেকে আমরা এই গ্রাম পঞ্চায়েতে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছি। গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকেই আমাদের বেতন দেওয়া হতো। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের টাকা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে প্রধান ম্যাডাম আমাদের কাজ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে খুবই কষ্টের বিষয়।” ছাঁটাই হওয়া কর্মী বলাই জানা জানিয়েছেন,”আমারও এতদিন কাজ করেছি। আমাদের প্রতি এতটুকু মানবিকতা দেখালেন না প্রধান। আমরা তৃণমূল করি বলে সুকৌশলে আমাদের কাজ কেড়ে নিয়েছেন। আমরা ভীষণই অসহায় বোধ করছি।” বিজেপি শাসিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমা পাত্র জানিয়েছেন,”১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অফিস কর্মী হিসেবে এই পাঁচজন যুক্ত ছিলেন। তার থেকেই এদের বেতন দেওয়া হতো। এখন ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। টাকাও নেই । তাই সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ওই পাঁচজনকে আপাতত কাজে আসতে না বলা হয়েছে। ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হলে ওদের আসতে বলা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: বাংলায় জঙ্গি মডিউল গড়তে হাতিয়ার রোহিঙ্গা ললনা, বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে জেহাদের ছক!]
এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। তিনি জানিয়েছেন, “ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপি দখল করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শুরু করেছে। আমাদের সক্রিয় কর্মী-সমর্থকরা দীর্ঘদিন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি তাঁরা। কাজ চলে যাওয়ায় মাথায় বাজ পড়ার সমান। রাজনীতি এতটা নোংরা হতে পারে, বিজেপি তার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এর বিরুদ্ধে আমরা দলীয়ভাবে ধিক্কার জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ওই পাঁচ কর্মীকে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।” ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ফোন মারফত মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভেকুটিয়া অঞ্চল তৃণমূলের সহ-সভাপতি অরূপ গোল এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম।
নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ভিডিও সৌমেন বন্দিকের কাছে কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযোগ পৌঁছেছে। বিডিও জানান, “অভিযোগ পাওয়ামাত্র বিষয়টি হলদিয়া মহকুমা শাসক এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসককে জানিয়েছি। দেখা যাক তাঁরা কি পদক্ষেপ করেন।” তবে এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনীতি দেখছেন না বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল। তিনি জানান, “গ্রাম পঞ্চায়েতে নিজস্ব তহবিলে টাকা নেই। ওই অস্থায়ী কর্মীদের কোথা থেকে বেতন দেওয়া হবে। ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সঠিক কাজ করেছেন।”
[আরও পড়ুন: ড়ছে দুর্ঘটনা, গতি কমছে গাড়ির, কলকাতার আরও তিনটি ট্রাম রুট বন্ধের প্রস্তাব]
আগামী দিনে নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া, খোলামবাড়ি ২ নম্বর এবং আমদাবাদ ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন ১০ জন অস্থায়ী কর্মীকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলে বিজেপি সহ-সভাপতি জানিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতে নিজস্ব তহবিলের ভাড়ার শূন্য। যে কারণে এমন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে তাঁর কথাতে স্পষ্ট। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে বলে জানা গিয়েছে ।