রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: টেট (TET) উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু জোটেনি চাকরি। ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করার। তা হয়নি। তাই এবার রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় অনুপ্রাণিত হয়ে পঞ্চায়েতে (Panchayat Election) কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন খেজুরির বিশেষভাবে সক্ষম যুবক।
হাঁটার শক্তিটুকু পর্যন্ত নেই। তবু ট্রাই সাইকেলে চেপে একাই মনোনয়ন জমা দেন শুভঙ্কর মণ্ডল। খেজুরির জাহানাবাদের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে মা,দাদা আর ছোট বোন আছে। জন্ম থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত বছর চল্লিশের শুভঙ্কর। তা নিয়েই লড়াই করে স্নাতক হন। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেখানে পাশও করেন। তবে চাকরি হয়নি। আপাতত বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কলাগেছিয়ায় একটি ইমিটেশন দোকান চালান শুভঙ্কর।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে খরচের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধে না কমিশন, কেন জানেন?]
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হতেই একাই তিন চাকার ‘রিকশা’ চালিয়ে খেজুরি-১ বিডিও অফিসে যান তিনি। কলাগেছিয়া গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পঞ্চায়েত সমিতির আসনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। বিডিও অফিস চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরাই তাঁকে রিকশা থেকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমায় সাহায্য করেন। শুভঙ্করের দাবি, ‘‘শিক্ষা নিয়ে এ রাজ্যে যা চলছে তাতে যাঁর কাছে টাকা নেই পড়াশোনা করলেও তাঁর চাকরি নেই। এভাবে সমাজ চলতে পারে না। তার জন্য পঞ্চায়েত থেকেই রাজনীতিতে বদল আনতে সকলকে বোঝাব।’’
কেন কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন? শুভঙ্করের দাবি, “ভারত জোড়ো যাত্রায় বেরিয়ে রাহুল গান্ধী বিশেষভাবে সক্ষমদের জড়িয়ে ধরেছিলেন। তা ছাড়া অধীর চৌধুরীর লড়াকু মানসিকতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যা এই রাজ্যে শাসক দল কিংবা অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।” তাঁর দাবি, “দিব্যাঙ্গ হিসেবে একটি ট্রাই সাইকেল পাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি শাসকদলের অনেক নেতাকেই বলেছিলাম। কেউই সাড়া দেয়নি। এলাকার এক প্রাক্তন জয়েন্ট বিডিও আমার কথা জেনে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছেন।’’
স্বাধীনতার এত বছর বাদেও এলাকার রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক হানাহানি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে শুভঙ্করের। তাই টেট পাশ করে এখন নিজের চাকরি নয়, গ্রামের ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষিত করে তোলার দাবি তুলে শুভঙ্কর পঞ্চায়েত ভোটে শামিল হয়েছেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষে।