শম্পালী মৌলিক: প্রথমবার বড়পর্দায় ‘একেনবাবু’ (Eken Babu) ফলে ছবিটা দেখার আগ্রহ ছিল। তার ওপর পয়লা বৈশাখে হল দখলের লড়াই, ‘দ্য একেন’ কি পারবে? প্রশ্নটা মাথায় নিয়েই ছবিটা দেখে ফেললাম। পাঁচটা সিরিজের পর সিনেমা হল। সচরাচর যা হয় না। সফল ফ্র্যাঞ্চাইজির উত্তরণ যাকে বলে। এতদিনে একেন্দ্র সেনকে প্রায় সকলেই ভালবেসে ফেলেছেন। এই গোয়েন্দা ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শবর, কীরিটির তুলনায় একেবারেই আলাদা। খেতে প্রচণ্ড ভালবাসে, হাড় কিপটে, ভুলভাল কথা বলে কিন্তু সত্যান্বেষণে নির্ভুল।
ছবি শুরু হয় বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়ার গোকুলনগর চত্বর দিয়ে। যেখানে একটি মূর্তির খোঁজে এসেছে প্রফেসর জয়ন্ত সেন। সে নিশ্চিত মূর্তি ওই মন্দির থেকে চুরি গিয়েছে। এরপর ছবিতে দেখা যায় একেনবাবু (অনির্বাণ চক্রবর্তী) দার্জিলিংয়ে বেড়াতে এসেছে কয়েকদিনের জন্য, তার দুই সঙ্গী বাপি (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়) আর প্রমথকে (সোমক ঘোষ) নিয়ে। শুরু থেকেই একেনের সংলাপ নজর কাড়বে। যেমন–ভিসুভিয়াস মানে বিষ্ণু বিশ্বাস, কিংবা বেঙ্গসরকার মানে সরকার বাড়ির ছেলে। সারল্য আর বুদ্ধিমত্তা একেনের ইউএসপি, ফলে দর্শক আনন্দ পাবেন। কেভেন্টার্স, গ্লেনারিজ, ম্যাল দেখতে দেখতে তিনজনের চোখে পড়ে শুটিং স্থল, যেখানে রয়েছে বিখ্যাত অভিনেত্রী বিপাশা মিত্র (পায়েল সরকার)। অভিনেত্রী বিপাশার দিকে চোখ রাখতেই একেন পুলকিত। এই বুঝি অ্যাক্টিংয়ের অফার এল! কিন্তু সে গুড়ে বালি।
দার্জিলিংয়ের এসপি মারফত বিপাশার ভিলায় ডাক পড়ে একেনদের। বিপাশা একেনকে জানায় খামে রাখা তার বাবার খুব পুরনো একটি ছবি মিসিং আলমারি থেকে। তাকে খুঁজে দিতে হবে। নিমরাজি হয়েও একেন্দ্র সেন কেসটা নিয়ে নেয়। শ্যেনদৃষ্টি তার, অতএব সেরে ফেলে সমস্ত হোমওয়ার্ক। এরপর গল্পে এন্ট্রি নেয় বিপাশার বন্ধু দেবরাজ সিং (দেবাশিস মণ্ডল), সেও একেনকে আরেকটি রহস্য সমাধানের অনুরোধ করে। তার হোটেলের স্টাফ অশোক বেরার মৃত্যুতদন্ত। আগাম ফিজ দিয়ে যায়, একেন না-ও করতে পারে না। পুলিশের কাছ থেকে একেনরা আরও জানে এখানের একটি প্রদর্শনী থেকে বিষ্ণুমূর্তি চুরি গিয়েছে। কিন্তু সেই মূর্তির তদন্তে বিপাশা তাকে ডাকেনি। একদিকে চুরি যাওয়া ছবির খোঁজ, বিষ্ণুমূর্তির অন্বেষণ, অন্যদিকে অশোকের মৃত্যু। দেবরাজের হোটেলের কর্মচারীদের একে একে জেরা করতে শুরু করে একেন। এর মাঝে বিপাশার সেক্রেটারি বুবুনের (দেবপ্রিয় মুখার্জি) মৃত্যু। মূর্তি না হয় দামি, দুষ্প্রাপ্য হতে পারে। ছবির খামে কি এমন ছিল যে চুরি গেল? রহস্য ঘনায় বিপাশা, দেবরাজ, বুবুন এবং দেবরাজের হোটেলের কর্মী ইন্দ্র ও তার বন্ধু আদিত্যকে ঘিরে। জট ছাড়ানোটা উপভোগ্য। মৃত্যু এবং হারানো ছবির কি কোনও যোগ আছে? কেন এই চুরি? থ্রিলারের বাকিটা প্রেক্ষাগৃহে দেখাই ভাল। কাহিনির অন্দরে লোভ, অসহায়তা, পারিবারিক কেচ্ছা সবই আছে। চিত্রনাট্য-সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত।
[আরও পড়ুন:মুক্তির দিনই ১৩৪ কোটি টাকার ব্যবসা, কেমন হল ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’, পড়ুন রিভিউ]
সব মিলিয়ে একেনবাবুর প্রথম ফিল্মি-টুর ভালই হয়েছে। রহস্যভেদের সঙ্গে মজাও আছে। ভাল লাগে একেন, বাপি, প্রমথর রসায়ন। তবে আরেকটু দার্জিলিং দেখা গেলে ভাল লাগত। অনির্বাণ চক্রবর্তী বরাবরের মতো বেশ ভাল। সুহোত্র মুখোপাধ্যায় বাপি-র ভূমিকায় অসাধারণ। তাকে যত দেখছি ভাল লাগছে। আরজে সোমক, তাঁর চরিত্রে মিশে গিয়েছেন। পায়েল সরকার তাঁর ভূমিকায় সাবলীল। দেবরাজ সিং-এর চরিত্রে দেবাশিস মণ্ডল ঠিকঠাক। সামান্য কিছু খটকা থাকলেও, একেনের নতুন সত্যান্বেষণ ভালই জমিয়ে দিয়েছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।