ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সিংহের (Lion) মুখ থেকে তখন সবে রেহাই পেয়েছেন। তখনই গৌতমের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এসেছিল ‘পশুপতি’ শব্দটা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও বোধহয় সে শব্দটাই বিড়বিড় করছেন গৌতম গুছাইত। শুক্রবার সাধুর বেশে আলিপুর চিড়িয়াখানায় (New Alipur Zoo) ঢুকে যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সিংহের এনক্লোজারে। ঝাঁপিয়ে পড়ার পরই সিংহের আঁচড়-কামড়ে মারাত্মক জখম হয়। মাথার ব্যামো বলেই তাঁকে তেমন কেউ একটা গা করছে না। কিন্তু তাঁর পশুপ্রেমের অতীত শুনলে অন্তত এটা বোঝা যায় যে, তিনি খাঁচায় থাকা পশুদের মুক্তি দিতে চান!
শুক্রবারের ঘটনাটা এখনও তাঁর ক্ষতের মতোই তাজা। এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষত বেশ গভীর। গৌতমের ডান কাঁধ ধরে সিংহটা টেনে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল নিজের খাঁচার ভিতরে। কাঁধে সে জায়গায় এখনও রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। ডান পায়ের চামড়া উঠে মাংস বেরিয়ে এসেছে। থাবার চাপে পায়ের হাড়ের টিবিয়ার নিচের অংশ ভেঙেছে। ১৮ ফুট উঁচু পাঁচিল থেকে লাফিয়ে পড়ে মারাত্মক চোট লেগেছে কোমরের লাম্বার স্পাইনাল কর্ডে। মাথার অক্সিপিটাল বোনে চোট। যখন গৌতমকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সিংহটা, পাথরে তার মাথা ঠুকে যায়। রক্ত সেখানেও জমাট বেঁধে। জ্ঞান থাকলেও দফায় দফায় অস্ত্রোপচার করতে হবে।
[আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরই মুখ্য প্রশাসক পদে ইস্তফা ফিরহাদের]
ছেলের এই অবস্থায় শনিবার পটাশপুর থেকে তাঁকে দেখতে এসেছিলেন গৌতমের বাবা পঞ্চানন গুছাইত। ছিলেন আরও এক আত্মীয়। সেই পঞ্চাননবাবুই শোনালেন ছেলের নানা কীর্তির কথা। মানসিক ভারসাম্যহীন বলে গৌতমবাবু ওষুধ খান নিয়মিত। যে কাজ তিনি করতেন, ‘মাথার ব্যমো’র জন্য তা গিয়েছে। গত তিনদিন ওষুধও খাননি। শুক্রবারের ঘটনার পর শনিবারও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পরে কিছু শুকনো খাবার আর বিস্কুট নিয়ে গৌতমকে দেখে আসেন ডিরেক্টর আশিস সামন্ত। গৌতমের বাবাই তখন ছেলের পশুপ্রেমের গল্প শুনিয়েছেন।
তার কাজের জায়গাতেই একবার একটি সাপ বেরয়। ভয়ে তাড়াহুড়ো পড়ে যায়। কেউ বলে, মারো সেটা। কেউ বলে ধরো। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাপটিও ভয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। শেষে সাপটি জালে জড়িয়ে যায়। সে সময় সেখানেই ছিল গৌতম। মানুষের ভয়ের থেকে তার বেশি ভাবনা হয়ে দাঁড়ায় সাপের জীবন নিয়ে। সাপটাকে যদি মেরে ফেলে সবাই! ওই জালেই সাপটাকে আগলে ঝাঁপ দেয় গৌতমও! সে এক সর্বনাশা কাণ্ড। তাকেও মুক্ত করতে চেয়েছিল গৌতম।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের দাবি মানল কমিশন! বুথে লাইন সামলাবে রাজ্য পুলিশই]
এদিকে চিড়িয়াখানার ডিরেক্টরের হাতে খাবারের প্যাকেট দেখে শরীরে ব্যথা নিয়েই গৌতম মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি নিরামিষাশী। আশিসবাবুও তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, “ভয় পাবেন না, মাংস-টাংস কিছু নয়।” তার শরীরের এমন অবস্থা দেখে করুণা হলেও এভাবে কোনও খাঁচায় অনুপ্রবেশের ঘটনাকে কড়া চোখেই দেখছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশেও ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে নির্দেশ, কেউ চিড়িয়াখানার ত্রিসীমানায় গৌতমকে দেখলে আর যেন ঢুকতে না দেয়। উলটোদিক থেকে কানাঘুষোয় এই খবরও ছড়িয়েছে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই গৌতম নাকি বলেছেন, আবার চিড়িয়াখানায় যাবেন। যে বাঘের কাছে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন গৌতম, তাকে মুক্ত করবেনই।