সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৬১ সালের আগস্ট মাস। আমেরিকার মসনদে তখন জন এফ কেনেডি। ৪৪ বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি এক ৭৯ বছরের বৃদ্ধ। ভারতের এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। নেহাতই সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সেই বৃদ্ধ কেনেডির কাছে জানতে চাইলেন, তাঁর পিঠে ব্যথা হয় কিনা। যা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর হকচকিত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে সেই বৃদ্ধ বলে ওঠেন, তিনি নেশায় রাজনীতিবিদ হলেও পেশায় চিকিৎসক। রোগীকে দেখে তাঁর অসুবিধার কথা ধরতে পারা সেই বৃদ্ধের কাছে ছিল এক অনায়াস কাজ। তিনি বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর মৃত্যুর পর ছয় দশক কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজও বাঙালি মানসে রয়ে গিয়েছে তাঁর কীর্তি-কাহিনি। যার মধ্যে অন্যতম এই সাক্ষাৎ। সেদিন কেনেডির থেকে তিনি যা ‘ফি’ নিয়েছিলেন, তাও বিস্ময়কর!
ঠিক কী হয়েছিল? কেনেডির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আচমকাই বিধান রায় (Bidhan Chandra Roy) তাঁকে প্রশ্ন করেন, ”আপনার পিঠে কি ব্যথা করে?” শুনে হতবাক হয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানান, সত্য়িই বেশ কিছুদিন ধরে পিঠব্যথায় ভুগছেন তিনি। এরপর তাঁকে নিজের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ওষুধ লিখে দেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, যদি ১ বছরের মধ্যে কেনেডি ভাল না হন, তাহলে নিজের অর্থ খরচ করে আমেরিকায় ফের আসবেন তিনি, প্রেসিডেন্টকে দেখতে।
[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ভার্সোভা-বান্দ্রা ব্রিজ হল ‘বীর সাভারকর সেতু’, হিন্দুত্বেই ভরসা রাখছে বিজেপি]
কেবল ওষুধ দেওয়াই নয়, পরে মুচকি হেসে বিধানচন্দ্র রায় নিজের ফি-ও চান কেনেডির কাছে। সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন করেন, ”বলুন, কত ফি চান আপনি?” এরপরই তাঁকে চমকে দিয়ে বিধানচন্দ্র বলেন, ৩০০ কোটি টাকা! আসলে ওই পরিমাণ অর্থের মার্কিন বিনিয়োগ তিনি চেয়েছিলেন বঙ্গদেশের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে কেনেডি (John F. Kennedy) জানান, তিনি সবরকম সহায়তা করবেন।
পরবর্তী সময়ে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সাহায্যে ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন গঠিত হয়। স্কুল থেকে শিল্পাঞ্চল- নানা সফল কর্মকাণ্ড সম্ভব করেছিল এই সংগঠনই। বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে চমকপ্রদ ইতিহাসের শেষ নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার মধ্যে অন্যতম হয়ে রয়েছে কেনেডির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের অসাধারণ কাহিনি। ১৯৬১ সালের ১০ আগস্ট নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল সেই সংবাদ। প্রতিবারই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনের সময় (মৃত্যুদিনও একই দিনে) এলেই নানা মিথ-ইতিহাসের সঙ্গে ফিরে ফিরে আসে এই আখ্যানটিও।