সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক দিকে রুক্ষ ভূপ্রকৃতি। অন্য দিকে তীব্র থেকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ! তাতে কী! সব বন্ধুরতাকে উপেক্ষা করেই দীর্ঘ বারো বছর পরে সেজে উঠছে লাদাখ। প্রস্তুতি চলছে উৎসবের। যার নেপথ্যে রয়েছে এক বাঙালি সাধকের সহস্র জন্মজয়ন্তী। নাম তাঁর নারোপা।
ইতিহাস বলে, নারোপা আজ থেকে হাজার বছর আগে জন্মেছিলেন এই বঙ্গেই। এক সময়ে সংসারজীবনে তাঁর বৈরাগ্য আসে। তখন নারোপা মনোযোগী হন বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়নে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মন দেন বৌদ্ধশাস্ত্র পঠন-পাঠনে।
Advertisement
এভাবেই কাটছিল দিন। একদিন যখন নারোপা নিজের কক্ষে পঠন-পাঠনে মগ্ন, তাঁর সামনে আবির্ভূতা হন এক বৌদ্ধ ডাকিনী। তিনি জানতে চান, নারোপা বৌদ্ধ তন্ত্রের সম্যক অর্থ বুঝতে পারছেন কি না! নারোপা ‘হ্যাঁ’ বললে ডাকিনী কেঁদে ফেলেন! জানান, এই তন্ত্রের জ্ঞান একমাত্র রয়েছে গুরু তিলোপার। ডাকিনীর নির্দেশে অতঃপর তিব্বতে যাত্রা করেন নারোপা। তিলোপার কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেন এবং তন্ত্র সাধনায় অর্জন করেন সিদ্ধি। সিদ্ধিলাভের পরে সেই ডাকিনী নারোপাকে উপহার দেন হাড়ের তৈরি কিছু দিব্যালঙ্কার। সেই সব দিব্যালঙ্কার আজও সযত্নে রক্ষিত লাদাখের হেমিস মঠে।
নারোপার স্মৃতিবিজড়িত এই হেমিস মঠই নারোপা ফেস্টিভ্যালের আহ্বায়ক। প্রতি বারো বছর অন্তর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষঙ্গ মাথায় রেখে এবং বিপুল লোকসমাগমের জন্য এর প্রসিদ্ধি হিমালয়ের কুম্ভমেলা হিসেবে।
প্রতি বারের মতো এবারেও প্রায় এক মাস ব্যাপী উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছে ৩০০ বছরেরও পুরনো হেমিস মঠ। জানা গিয়েছে, এবারের উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ এক শতাব্দীপ্রাচীন থাঙ্কা বা বৌদ্ধ পটচিত্র উত্তোলন। হেমিস মঠের শীর্ষে গুরু পদ্মসম্ভবের চিত্রাঙ্কিত এই থাঙ্কা সগৌরবে জয় ঘোষণা করবে বজ্রযান তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের। পাশাপাশি, দ্রুকপা সন্ন্যাসিনীরা পরিবেশন করবেন সম্মিলিত বাদ্য। কুং ফু-তে পারদর্শিনী বলে যাঁদের ‘কুং ফু নান’ বলেও সম্বোধন করা হয়।
এছাড়া চলবে নানা সভা। যাদের উদ্দেশ্য বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের প্রচার। তবে সে সব ধর্মীয় দিক বাদ দিলে নারোপা উৎসব সাধারণ দর্শকের জন্য কী নিয়ে আসছে?
নিয়ে আসছে উৎসবের বর্ণিলতা! ছবিগুলো তো দেখছেন! মুখোশ নাচে, ধ্রুপদী বাদ্য পরিবেশনায়, রঙিন পোশাকে আর অলঙ্কারে হেসে উঠবে হেমিস মঠ তথা লাদাখ। সেই উৎসবের আমেজ মনে ভরে নিলে বছরভর মন ভাল থাকবে এমনিতেই!
এছাড়া জানা যাবে নিজের ভাগ্যরেখা কোন পথে চলেছে, সেটাও! নারোপা উৎসব শেষ হয় ইগু হ্রদের ধারে। লোকবিশ্বাস, মন স্বচ্ছ হলে এই হ্রদের জলে দেখা যায় নিজের ভাগ্যের রূপরেখা। এটাও বড় কম কথা নয়! তার সঙ্গেই দেখতে পাবেন গুরু নারোপার দিব্য অলঙ্কারও! তার জৌলুস দেখলে শ্রদ্ধায়, বিস্ময়ে মাথা আপনা থেকেই নত হয়ে আসবে।
কে বলতে পারে, সেই দিব্য অলঙ্কারের দর্শনেই হয়তো বা প্রসন্ন হবে ভাগ্য, সুখে পূর্ণ হবে জীবনের বাকি অধ্যায়!
উৎসবের সময়সীমা: নারোপা ফেস্টিভ্যাল শুরু হচ্ছে চলতি মাসের ১৬ তারিখে। চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত।
কী ভাবে যাবেন: ট্রেন ধরে চলে আসুন জম্মু ও কাশ্মীরে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান হেমিস মঠে।
কোথায় থাকবেন: হেমিস মঠ ঘিরে অনেক হোটেলই রয়েছে। পকেটসই কোনও একটায় ঠাঁই নিলেই হল!
The post হিমালয়ের কুম্ভমেলায় খুঁজে পান নিজেকে appeared first on Sangbad Pratidin.