শুভঙ্কর বসু: অনলাইনে জীবনের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে দু’লক্ষ। হ্যাঁ। অনলাইনে রেলের টিকিট কাটলে মিলবে ইনসিওরেন্স। সেই সঙ্গে জীবনের মূল্যও বেড়ে যাবে দু’লক্ষ টাকা। আর কাগজের টিকিটে লবডঙ্কা! সম্প্রতি লোকসভা অধিবেশনে রেলে ইনসিওরেন্স ব্যবস্থা নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, আইআরসিটিসির বা রেলওয়ে ওয়েবসাইট থেকে যাঁরা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটবেন তাঁরাই সামান্য প্রিমিয়াম দিয়ে ইনসিওরেন্সের সুবিধা পাবেন। কিন্তু রেলওয়ে রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে কাগজের টিকিট কাটলে মিলবে না এই সুবিধা। ট্রেন দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের সংস্থান বহু পুরনো। রেল আইনেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ধার্য রয়েছে। রেল আইন ১৯৮৯-এর ১২৩, ১২৪ এবং ১২৪(এ) ধারা মোতাবেক ট্রেন দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ মেলে। অঙ্গহানি বা গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৬৪ হাজার থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে আইনে।
[বিনা টিকিটে যাত্রা খোদ রেলের পদস্থ কর্তার, রাজধানী এক্সপ্রেসে শোরগোল]
কিন্তু অনলাইনে টিকিট কাটা থাকলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ একলপ্তে বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই। অনলাইনে ইনসিওরেন্সের ব্যবস্থা থাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু ঘটলে ক্ষতিপূরণ মিলবে ১০ লক্ষ টাকা। দুর্ঘটনায় পুরোপুরি শারীরিক অক্ষম হলেও ক্ষতিপূরণ মিলবে ১০ লক্ষ। অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ধরা হয়েছে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ মিলবে। এছাড়াও ছোট আঘাতের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ মিলতে পারে। অনলাইন টিকিটে ইনসিওরেন্স দিতে শ্রীরাম জেনারেল ইনসিওরেন্স, আইসিআইসিআই লোম্বার্ড ও রয়্যাল সুন্দরম জেনারেল ইনসিওরেন্স নামক তিনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে রেল। ই-টিকিটে ইনসিওরেন্স চালুর পর প্রথমে যাত্রীদের কাছ থেকে ৯২ পয়সা প্রিমিয়াম ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা পুরোপুরি ফ্রি করে দেওয়া হয়। শনিবার থেকে ই-টিকিটে ফের ইনসিওরেন্স চালু করেছে রেল। কিন্তু প্রশ্ন, শুধুমাত্র অনলাইনেই কেন এমন সুবিধা? রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার দেশজুড়ে যে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করতে চাইছে তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেলের এই নিয়মে স্বভাবতই প্রশ্ন তুলছেন কাগজের টিকিটের যাত্রীরা। অনেকের প্রশ্ন, ‘‘একই ভাড়া দিলেও কেন মিলবে না এই সুবিধা?’’
[মোদির স্বপ্নের বুলেট ট্রেন ছোটাতে জমিদাতাদের বিশেষ অফার রেলের]
২০০২ সালে আইআরসিটিসি চালু হওয়ার পর থেকে গত ১৬ বছরে অনলাইনে রেলের টিকিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সিংহভাগ যাত্রী এখনও কাগজের টিকিটেই ভরসা করেন। তাছাড়া আইআরসিটিসি-র সাইট থেকে টিকিট কাটার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকে এখনও অবগতও নন অনেকে। একাধিক যাত্রীই বলছেন, ‘‘আইআরসিটিসির ওয়েবসাইটে ঠিকমতো লগ ইনই করা যায় না।’’ তাছাড়া এখনও দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা যায়নি। একাধিক এলাকায় কোনও ইন্টারনেট টাওয়ারই নেই। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪৩ হাজার ৮৮টি গ্রাম এখনও ইন্টারনেট পরিষেবার বাইরে। স্বাভাবিকভাবেই অনলাইন টিকিট প্রোমোট করতে রেলের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে যাত্রীমহলে।
The post ট্রেনের অনলাইন টিকিটে জীবনের দাম বাড়ছে দু’লক্ষ, জানেন কীভাবে? appeared first on Sangbad Pratidin.