সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য বাংলাদেশের প্রধান ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। এবার সেই রাজু ভাস্কর্যের নারীর মাথাই কালো হিজাবে ঢেকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, নারীর অধিকার, স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতেই কি এই কাণ্ড ঘটনা হয়েছে? যদিও কে বা কারা ওই ভাস্কর্যের নারী মূর্তির মাথা হিজাবে ঢেকে দিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, রবিবার রাতে হঠাৎ দেখা যায় ভাস্কর্যের নারীর মাথা কালো কাপড় দিয়ে হিজাবের মতো করে মোড়ানো। এর পরই হইচই পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি লিটন নন্দী রাত ১২টার নাগাদ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কালো কাপড় নামিয়ে ফেলেন। এনিয়ে লিটন নন্দী আজ সোমবার জানান, "ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এমনকি কখন এই কালো কাপড় দিয়ে ভাস্কর্যের মাথা মোড়ানো হয়েছে, তাও জানা যায়নি। জড়িতদের শনাক্ত করতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিতর্ক সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়েছে। এই কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে আজই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জানা গিয়েছে, বিষয়টি জানাজানি হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ দুজন সহকারী প্রক্টরকে ঘটনাটি দেখার জন্য পাঠান। সমস্ত কিছু দেখার পর সহকারী প্রক্টর মহম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা গিয়ে দেখি রাজু ভাস্কর্যে কাপড় নামিয়ে ফেলা হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এখন পর্যন্ত তা আমরা জানতে পারিনি। তবে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁদের শনাক্ত করা হবে। আমরা দ্রুত তিন থেকে চারজন সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব। বিভিন্ন এজেন্সি থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়েও তদন্ত করা হবে। এখানে এসব করা যাবে না।" তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, রাতে কয়েকজন যুবক মাস্ক পরে মোটরবাইকে এসে ওই কালো কাপড় মূর্তিতে পরিয়ে পালিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় দানা বেঁধেছে নানা বিতর্ক।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল বের করেছিলেন ছাত্ররা। সেই মিছিলে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। গুলিতে নিহত হন মিছিলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু। রাজু-সহ সেদিনের সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহিদের স্মরণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছিল এই ভাস্কর্য। ১৯৯৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী রাজু ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন। ভাস্কর্যে মুনীম হোসেন রানা, শাহানা আক্তার শিলু, সাঈদ হাসান তুহিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ খান, তাসফির সিদ্দিক, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, উৎপল চন্দ্র রায় ও গোলাম কিবরিয়া রনি নামে ৮ জনের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়।
সম্প্রতি পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। দেশে ছেড়ে তিনি এখন রয়েছেন ভারতে। হাসিনার দেশত্যাগের পর কার্যত ধবংসযজ্ঞ চলেছে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। দিকে দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে তৈরি নানা ভাস্কর্য-সহ অন্যান্য স্থাপত্যও ভাঙচুর করা হয়। রক্ষা পায়নি গুলশান হামলার স্মৃতিতে তৈরি ‘দীপ্ত শপথ’ স্মারকও। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত দিন ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ২ পুলিশ আধিকারিক। তাঁদের স্মরণেই তৈরি করা হয়েছিল ওই স্মারক। আগস্ট মাসের শেষে সেই ঐতিহাসিক ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে সেখানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের পোস্টার লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এবার নিশানা করা হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক রাজু ভাস্কর্যকেও।