shono
Advertisement

ঘরে ঘরে যমজ, অদ্ভুত রহস্য বুকে নিয়ে পর্যটকদের টানে কেরলের এই গ্রাম

ভারতের ওই গ্রামে বাস ৪০০ জোড়া যমজের!
Posted: 10:14 PM Nov 05, 2021Updated: 01:34 PM Nov 07, 2021

বিশ্বদীপ দে: ”দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ, হোরাশিও…” শেক্সপিয়রের লেখা এই অমোঘ সংলাপ নেহাতই ‘হ্যামলেট’ নাটকের একটি লাইন মাত্র নয়। তা জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়ের জলছাপকেই তুলে ধরে। কেরলের (Kerala) কোদিনহি গ্রামের মতো আশ্চর্য স্থানের কথা বলতে বসলে শেক্ষপীরের কথা মনে পড়ে যেতে বাধ্য। হ্যাঁ, এই গ্রামে আপনি বেড়াতে এলে আবিষ্কার করবেন, আসতে যেতে বহু যমজ মানুষেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন! ভারতে প্রতি ১ হাজার নবজাতকের মধ্যে ৯ জোড়া যমজ সন্তান। অথচ কেরলের এই গ্রামে তা প্রতি হাজারে ৪৫! আকারে নেহাতই ছোট্ট এই গ্রামে অন্তত ৪০০ জোড়া যমজ মানুষ বাস করেন। এমন অদ্ভুত পরিসংখ্যানে বিস্মিত গোটা বিশ্ব।

Advertisement

আপনি যদি কোদিনহি গ্রামে বেড়াতে আসেন, তাহলে প্রবেশের সময়ই আপনার চোখে পড়বে ‘ঈশ্বরের আপন যমজদের দেশে স্বাগত’। কোচি থেকে ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে ২ হাজার পরিবারের বাস। সমুদ্রের পাড়ে অবস্থিত ছোট্ট গ্রামটি চেহারা, চরিত্রে কেরলের যে কোনও গ্রামের মতোই প্রকৃতির আশীর্বাদে পুষ্ট। পাশাপাশি রয়েছে আরও এক আশ্চর্য আশীর্বাদ। ২০১৭ সালের হিসেবে ৪০০ জোড়া যমজ মানুষ থাকেন গ্রামে। আরেক সংবাদমাধ্যমের হিসেব বলছে, এখন তা বেড়ে ৪৫০ জোড়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, ব্যাপারটা কী? কেন এমন এই গ্রামে যমজদের এমন অবিশ্বাস্য আধিক্য?

[আরও পড়ুন: হিন্দুদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এ কী করলেন পাকিস্তানের মন্ত্রী! শোরগোল নেটদুনিয়ায়]

কেরলের এই গ্রাম ঘিরে বিস্ময়ের সীমা নেই

এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার কোনও কারণ খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে গবেষকদের এক বিরাট দল এসেছিল কোদিনহি গ্রামে। হায়দরাবাদের সিএসআইআর-সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউসার বায়োলজি, কেরল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড ওশিয়ান স্টাডিজ থেকে শুরু করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানি থেকে গবেষকরা এসেছিলেন। তাঁরা এই গ্রামের বহু যমজের শহরীর থেকে লালারস ও চুলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু নমুনা সংগ্রহ করে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েও এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। তবে কয়েকটি কারণের কথা ভেসে উঠেছে। তবে তার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও কোনও ডাক্তারের অনুমান, জিনগত কারণ হয়তো রয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে এমন কথাও উঠে এসেছে, যে এই গ্রামের জলহাওয়ায় এমন কোনও উপাদান হয়তো রয়েছে যা অনুঘটক হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের খাদ্যাভ্যাস থেকে আরও নানা রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মান্যতা পায়নি কোনওটিই। রহস্যের কুয়াশা থেকেই গিয়েছে ঈশ্বরের আপন দেশের এই আশ্চর্য গ্রামের উপরে।

সবুজে ঘেরা সুন্দর গ্রাম কোদিনহি

[আরও পড়ুন: OMG! ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে ২০ কোটি টাকার হিরে খুঁজে পেলেন বৃ্দ্ধা! তারপর…]

কী করে মাতৃগর্ভে তৈরি হয় যমজ ভ্রূণ? সাধারণত প্রতি ঋতুচক্রে নারীর দেহে একই সময়ে ডিম্বাশয় থেকে একটি মাত্র ডিম্বাণু নির্গত হয়। যদি কখনও দু’টি ডিম্বাণু নির্গত হয় তাহলে শারীরিক মিলন হলে শুক্রাণু দু’টিকেই নিষিক্ত করে। তখন তৈরি হয় যমজ ভ্রূণ। আবার অনেক সময় একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু দু’টি কোষে বিভক্ত হলেও যমজ সন্তানের জন্ম দেন মা।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন তথা মানবদেহের বাইরে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার প্রক্রিয়াতেও ইদানীং সন্তানের জন্ম দেন অনেকে। সেই পদ্ধতিতে নিষেক ঘটালে অনেক সময়ই যমজ বা তারও বেশি ভ্রূণ তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কেরলের এই গ্রামের ক্ষেত্রে তেমন কিছু কখনও ঘটেনি। বিষয়টা খতিয়ে দেখে তাই আজও বিস্মিত গবেষকরা।

কী করে প্রথমবার ব্যাপারটা ধরা পড়ল? গ্রামের এক যমজ বোনই প্রথম আবিষ্কার করে বিষয়টা। তারা জানতে পারে তাদের স্কুলেই রয়েছে ২৪ জোড়া যমজ। স্বাভাবিক ভাবেই তা জানাজানি হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ক্রমে পরিষ্কার হয়ে যায় ওই গ্রামে মোট ২৮০ জোড়া যমজ রয়েছে। তৈরি হয় TAKA। অর্থাৎ ‘দ্য টুইনস অ্যান্ড কিন অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠনের কাজ কোদিনহির সমস্ত যমজের জন্য সহায়তা প্রদান করা।

এই গ্রামের যমজ রহস্যের আজও সমাধান হয়নি

তবে কোদিনহিই একমাত্র গ্রাম নয় যেখানে যমজ রহস্য এমন কুয়াশা তৈরি করেছে। নাইজেরিয়ার ইগবো-ওরা, ব্রাজিলের ক্যানডিডো গোডোই ও ভিয়েতনামের হাং লক কমিউনে এমনই যমজ-আধিক্যের বিস্ময় রয়েছে। এর মধ্যে ইগবো-ওরাকে বলা হয় ‘পৃথিবীর যমজ রাজধানী’। নাম থেকেই পরিষ্কার এখানেও বিস্ময় কিছু কম নেই। বিবিসির এক প্রতিবেদন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই গ্রামে একটি পরিবারেই তিন বা তারও বেশি যমজ রয়েছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে, গ্রামে কোনও পরিবারে যমজ সন্তান না থাকলে সেটাই অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।

এই তালিকারই অন্যতম ‘আশ্চর্য’ কোদিনহি গ্রাম। কী করে যমজরা পরস্পরের থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারেন? সেও তো কম কঠিন বিষয় নয়। এক সংবাদমাধ্যমকে এই অসুবিধার প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে জনৈক অভি ভাস্করের জবাব, ”আমি আমার চুলে বাঁদিকে সিঁথি কাটি। আমার ভাই ডানদিকে সিঁথি কাটে।”

পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠেছে কোদিনহি

বিজ্ঞানীরা আজও খুঁজে চলেছেন কারণ। হয়তো একদিন এই রহস্যেরও সমাধান হবে। যেভাবে আরও কঠিন ও আপাত দুর্বোধ্য ধাঁধারও সমাধান করেছে বিজ্ঞান। কিন্তু তা খুঁজে পেতে যতদিনই লাগুক, ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠেছে কোদিনহি। যে গ্রাম এমনিতে রাজ্যের অন্য গ্রামগুলির মতোই। কিন্তু সামান্য খেয়াল করলেই পথেঘাটে দেখা মিলবে যমজ মানুষদের। সেই বিস্ময়ের অনুভূতির কাছে বারবার ফিরতে চান পর্যটকরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার