শেখর চন্দ্র, আসানসোল: কালীপুজোর সময় আসানসোলের কালীপাহাড়ি হয়ে ওঠে আর এক গয়াক্ষেত্র! যেখানে অতৃপ্ত আত্মাদের পিণ্ডদান করা হয়। অর্থ্যাৎ ভূত পিশাচ-প্রেতদের মুক্তি দেওয়া হয় ওইদিন। তবে সারা বছর নয়, কালীপুজোর সময় বিশেষ তিথিতে এক কুয়োর মধ্যে চলে পিণ্ডদান পর্ব। যে কুয়োটি ‘প্রেত কুয়ো’ নামে পরিচিত। বন্দি থাকা ভূত, পিশাচদের নাকি মুক্তি দেওয়া হয় পুজোর কুম্ভযজ্ঞ তিথিতে। এমনটাই দাবি ‘বিশ্বগয়া মা কালীবুড়ি’ মন্দিরের তান্ত্রিকের। এই যুক্তি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরা না মানলেও বিশ্বগয়া কালীবুড়ি মন্দিরে স্থানীয়রা ঘটনার সাক্ষী হতে ভিড় জমান কালীপুজোয়।
কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী। ঠিক সেই সময় থেকেই ভূত-প্রেতদের নিয়ে তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা দেখা যায় আসানসোলের বিশেষ এই মন্দিরে। দুনম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এই মন্দির চত্বরেই রয়েছে এক কুয়ো। কিন্তু কুয়োর মুখটি খাঁচাবন্দি। গায়ে লেখা ‘প্রেত কুয়ো’। কী হয় এখানে?
তান্ত্রিকের দাবি, জাতীয় সড়কের ধারে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বা স্থানীয় কারোর অপঘাতে মৃত্যু হলে সেই অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এলাকায়। পথ চলতি মানুষের উপর সেই আত্মা ভর করলে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই তাদের ওই কুয়োর মধ্যে মা কালীবুড়ির সহায়তায় মন্ত্র বলে আটকে রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘‘কালীপুজোর সময় বিশেষ তিথি দেখে মহাকুম্ভ যজ্ঞ করা হয়। সেই যজ্ঞের পর কুয়োয় পিণ্ডদান করে ওই প্রেতদের মুক্তি দেওয়া হয়।’’
এসব আজগুবি ও অলৌকিক দাবি কী বিশ্বাস যোগ্য? তান্ত্রিকের দাবি, কালীপুজো মানেই শক্তির উপাসনা। কালী মূর্তির পাশেই দেখা যায় ডাকিনী, যোগিনী বা ভূত, পিশাচদের। যদি মা কালীকে শ্রদ্ধা ভক্তি ভরে সবাই পুজো করেন তবে ভূত-পিশাচ বা প্রেতের অস্তিত্বও মানতে অসুবিধা কোথায়? দেবতা মানলে অপদেবতাকেও বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু যুক্তিবাদী সংগঠন বা বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ এই ব্যাখ্যাকে৷ তবু প্রতিবছর কালীপুজোয় বিশেষ তন্ত্রসাধনা দেখতে ভিড় জমান কালীপাহাড়ির বাসিন্দারা।