সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছায়াছবি শিল্প না ব্যবসা?
খুব বেশি করে এই প্রশ্নটাই এখন নাড়া দিচ্ছে। কী বলিউডে, কী টলিপাড়ায়! উত্তরটা যদি শেষ পর্যন্ত ব্যবসাতেই এসে ঠেকে, তাহলে কালকের ভোর বেশ কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে।
আসলে, আগামিকাল, ১২ আগস্ট একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে পাঁচটা ছবি। বলিউডে একে অপরকে জোরদার টেক্কা দেওয়ার জন্য তৈরি হৃতিক রোশনের ‘মহেঞ্জো দারো’ এবং অক্ষয় কুমারের ‘রুস্তম’। অন্য দিকে, টলিপাড়া থেকে পরস্পরের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ১২ আগস্ট একই সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে পরমব্রতর ‘হেমন্ত’ এবং শাশ্বতর ‘ঈগলের চোখ’। সেই দঙ্গলে কিছুটা হলেও কি কোণঠাসা হয়ে আছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়? বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে কালকেই তো মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি ‘শিকারি’!
যদি সারা ভারত এবং আন্তর্জাতিক বাজারের কথা ভাবতে হয়, তাহলে কিছুটা হলেও এই পাঁচ ছবির মধ্যে এগিয়ে থাকবে ‘মহেঞ্জো দারো’ এবং ‘রুস্তম’। কেন না, বলিউডের ছবি হালফিলে একই সঙ্গে মুক্তি পায় সারা পৃথিবীতে। বলিউডের ছবির গ্রহণযোগ্যতাও ভারতের বাজারে বেশি। সে দিক থেকে পরস্পরের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করেও ব্যবসার অনেকটাই থাকবে হৃতিক রোশন এবং অক্ষয় কুমারের খাতে।
যদিও দুই নায়ক ব্যাপারটাকে মোটেও সেরকম ভাবে দেখতে চাইছেন না। দিন কয়েক আগেই এই একসঙ্গে ছবি মুক্তির ব্যাপারটা নিয়ে টুইট করেছিলেন হৃতিক রোশন। বলিউডের বাজার যখন দুই নায়কের মধ্যে একটা ঝগড়া বাধিয়ে দিতে তৈরি, সেই মুহূর্তে হৃতিকের টুইট নিয়ে এসেছিল বন্ধুত্বের ইঙ্গিত। টুইট করে জানিয়েছিলেন হৃতিক- ‘মহেঞ্জো দারো’ মুক্তি পেতে আর খুব একটা দেরি নেই! দেরি নেই ‘রুস্তম’-এর মুক্তিরও! তাই দর্শকদের তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছিলেন হৃতিক।
অক্ষয় কুমারের কাছ থেকে প্রত্যুত্তর এসেছিল স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। লিখেছিলেন নায়ক- ”আমায় কাঁদাবি না কি পাগলা! থাম এবার!” আর, দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর তরফ থেকে মিলেছিল হৃতিকেরই কথার প্রতিধ্বনি- ”আপনারা তৈরি থাকুন পপকর্ন নিয়ে। সপ্তাহান্ত জোরদার এন্টারটেনমেন্ট নিয়ে আসছে!”
অবশ্য, এটাই প্রথম নয়। এর আগে যখন মুক্তি পেয়েছিল রুস্তম-এর ট্রেলার, তখনও অক্ষয় কুমারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন হৃতিক। লিখেছিলেন, ”রুস্তম-এর ট্রেলার দেখে মন ভরে গেল।” সেবার তাঁর টুইটের প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন টুইঙ্কল খান্না। লিখেছিলেন, ”দুটো ছবিই ভাল চলুক! আমরা একসঙ্গে সেলিব্রেট করব!”
ব্যাপারটা কি নেহাতই সৌজন্য বিনিময়? কেন না, কিছুটা হলেও তো একটা ছবি অন্যের দর্শক টানবে। এক দল আগে বেছে নেবেন যে কোনও একটা ছবি! পরে এগোবেন অন্যটার দিকে। বা, আদৌ না-ও এগোতে পারেন! এছাড়া, পাইরেটেড কপির ব্যাপারটাও আছে! সেটাও প্রেক্ষাগৃহে কিছুটা হলেও দর্শকের ভিড় কমাবে। ফলে, অক্ষয় কুমারের ভক্তদল বনাম হৃতিক রোশনের ভক্তদল- দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
আর, এই দুই ছবিকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলতে পারে ‘হেমন্ত’ আর ‘ঈগলের চোখ’ একমাত্র কলকাতার বাজারে। বাংলা ছবি এখনও আঞ্চলিক ছবি হিসেবেই ব্যবসা করে। ফলে, সারা ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে ‘হেমন্ত’-‘ঈগলের চোখ’ থেকে ‘রুস্তম’-‘মহেঞ্জো দারো’র ভয় পাওয়ার কিছু নেই! শ্রাবন্তীর ‘শিকারি’-কে কলকাতার বাজারের ভিত্তিতে একটু আলাদা করে রাখতেই হচ্ছে। কেন না, মশলা বাংলা ছবি এখনও তার টাকা তোলে মফস্বল থেকেই!
তাহলে, কলকাতার বাজার আর বাংলা ছবির হিসেব ধরলে কে এগিয়ে থাকবেন? শাশ্বত না পরমব্রত? লড়াই কিন্তু জোরদার। অনেক দিন পরে দুই নায়কের ছবি পাচ্ছেন দর্শকরা। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’-এর কাহিনি আর অঞ্জন দত্তর পরিচালনা নিয়ে ‘হেমন্ত’র পাল্লা ভালই ভারি! ‘হেমন্ত’ শিবিরে রয়েছেন টলিপাড়ার অনেক ডাকসাইটে অভিনেতাই!
আবার, ‘ঈগলের চোখ’ নিয়েও প্রত্যাশা তুঙ্গে। অরিন্দম শীলের পরিচালনায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে আগেই নজর কেড়েছিল শবরের প্রথম ছবি। দর্শকরা ভালবেসেছিলেন লালবাজারের গোয়েন্দা শবরকেও। সেই যুগলবন্দি আরও টানটান হয়ে ফিরছে শবরের দ্বিতীয় সেলুলয়েড সফরে। রয়েছে সিরিয়াল কিলিং আর যৌনতার ককটেলও! এই ছবির স্টারকাস্টও বেশ চমকে ভরা!
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিড়ে শ্রাবন্তী কিন্তু রয়েছেন বেশ নিরাপদ জায়গাতেই! তাঁর ছবির দর্শক আলাদা। তাঁরা অন্য সব ছবি ফেলে ‘শিকারি’-তেই মন দেবেন। ফলে, দুই নায়কের দঙ্গল নিয়ে শ্রাবন্তীর চিন্তিত হওয়ার তেমন কারণ নেই!
সব মিলিয়ে, ভালই একটা হলুস্থুলু ফেলবে কালকের সকাল। বলিউডে কী হবে, বলা মুশকিল! তবে, টলিপাড়ায় যে ছবিই এগিয়ে থাক, শেষ হাসিটা বোধহয় হাসবেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ই!
‘হেমন্ত’-তেও যে রয়েছেন তিনি! বেশ বড়সড় এক চরিত্রে। তাঁর জন্যই তো হেমন্তর রক্তে ঢুকেছে প্রতিশোধস্পৃহা! বাকিটা এবার দেখা যাক!
The post সেলুলয়েডের চতুষ্কোণে ঝগড়া বাধাবে শুক্রবারের সকাল! appeared first on Sangbad Pratidin.