সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের বরখাস্ত ফুটবল কোচ ইগর স্টিমাচ ফেডারেশন কর্তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটালেন। বৃহস্পতিবারই তিনি জানিয়েছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকদের জন্য তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করবেন। সেখানে আস্তিনের শেষ তাস বের করবেন তিনি।
সেই সাংবাদিক বৈঠকে ইগর স্টিমাচ তীব্র আক্রমণ করেছেন ফেডারেশনকে। জানিয়েছেন ভারতের ফুটবল দল পরিচালনা করতে গিয়ে যে পরিমাণ চাপ তাঁকে নিতে হয়েছিল, তার জন্য হার্টের অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছিল স্টিমাচকে (Igor Stimac)। কড়া ভাষায় বলে দিলেন, ভারতীয় ফুটবল জেলবন্দি হয়ে রয়েছে। উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: জয় দিয়ে কোপা শুরু বিশ্বজয়ীদের, মেসির নজির গড়া ম্যাচে কানাডাকে হারাল আর্জেন্টিনা]
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে ক্রোয়েশিয়ান কোচের দাবি, ''এশিয়ান কাপের থেকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটাই আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এআইএফপি আমাকে হুমকি দিয়েছিল। ২ ডিসেম্বর যখন আমি শেষ হুমকি পাই, তখন আমাকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়। এই ঘটনার কথা কারওরই জানা নেই। যা ঘটছিল তা নিয়ে আমি অত্যন্ত বিরক্ত ছিলাম। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে অবসাদে ভুগছিলাম। আমার হার্টে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। আমি সর্বসমক্ষে বলতে চাইনি কোনওদিনই।'' ক্রোয়েশিয়ান কোচের তোপের মুখে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসকরা। স্টিমাচ বলেছেন, ''ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসকরা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমেই দেশের ফুটবল পরিচালনা করতে চান। ভারতীয় ফুটবলের ক্যালেন্ডার সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান নেই বললেই চলে।'' গত পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের রিমোট কন্ট্রোল তাঁর হাতে ছিল। স্টিমাচকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''গত পাঁচ বছর ধরে এআইএফএফ-এর একটাই সাফল্য। আর তা হল আমাকে শান্ত রাখা।''
বরখাস্ত হওয়া ইস্তক স্টিমাচের নিশানায় ফেডারেশন কর্তারা। ক্ষতিপূরণ না পেলে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ। শুক্রবার ক্রোয়েশিয়ান কোচ বলেছেন, ''ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসকদের ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে কোনও জ্ঞানই নেই। ভারতীয় ফুটবলের ক্যালেন্ডার তাঁরা জানেন না। ওদের নজর কেবল ক্ষমতা দখল করা এবং পজিশন।''
ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবেকেও আক্রমণ করেছেন স্টিমাচ। ক্রোয়েশিয়ান কোচের তোপের মুখে, ''কল্যাণ কেবল জনপ্রিয় হওয়ারই চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক মিডিয়া মিট সেকথাই বলছে। সবাই বলছেন, কল্যাণ রাজনৈতিক নেতা। কলকাতাতেই ওকে কেউ চেনে না। এমন একজনকে দরকার যে সত্যিকারের ক্ষমতাবান এবং দেশের ফুটবলকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।''
কল্যাণ চৌবেকে নিয়ে স্টিমাচ আরও বলেন, ''কল্যাণ সভাপতি হওয়ার কয়েক মাস পরে কলকাতার এক হোটেলে প্রথম দেখা হয়েছিল। ৩ মিনিটও কথা হয়নি আমাদের। তার মধ্যে অন্তত পাঁচ বার ঘড়ি দেখেছিল।''
এশিয়ান গেমসে প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে একপ্রস্থ নাটক হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গের উত্থাপ্পন করে স্টিমাচ এদিন বলেন, ''ওরা তো ফিফা উইন্ডোর বাইরে গিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের আযোজন করতে চেয়েছিল। এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ নিয়ে কী নাটকটাই না হল!'' আইএসএল-কেও গুরুত্ব দেননি স্টিমাচ। তিনি বলেছেন, ''কয়েকজন বিদেশি ফুটবলার ছাড়া ভালো মানের বিদেশি খেলতে আসে না এখানে। যারা আসেন, তারা অন্য জায়গায় সুযোগ পায় না।''
আক্রমণের সুরে স্টিমাচ জানান, দেশের বাইরে ভারতীয় ফুটবল প্রশাসকদের কোনও ক্ষমতাই নেই। তাঁর বক্তব্য, ''এএফসিতে ভারতের কোনও ক্ষমতাই নেই। এএফসিতে আরও বেশি ক্ষমতাশালী হওয়াই ফেডারেশনের লক্ষ্য।''
বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছতে পারেনি ভারত। সল্টলেক স্টেডিয়ামে কুয়েতের সঙ্গে ড্র করে স্টিমাচের দল। কাতারে গিয়ে হার মানে কাতারের কাছে। আর তার পরই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় ভারতের। তার অব্যবহিত পরেই স্টিমাচকে বরখাস্ত করা হয়। স্টিমাচ সেই প্রসঙ্গে বলছেন, ''আমাকে কেউ কোনওদিন বরখাস্ত করতে পারেনি। এবারই প্রথমবার আমি বরখাস্ত হলাম। আমার হাতে এখন সময় আছে। ইউরোর কয়েকটা ম্যাচ আগে দেখবো। তার পরে ক্রোয়েশিয়া ফিরে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।"