shono
Advertisement

Breaking News

আদর্শ বিমা চিনবেন কীভাবে? সঠিক পথ দেখালেন বিশেষজ্ঞ

বিমাই হল আর্থিক নিরাপত্তার ভিত।
Posted: 02:30 PM Apr 01, 2024Updated: 02:30 PM Apr 01, 2024

বিমার ভবিষ্যৎ কী? দ্রুত এবং সহজে পলিসির টাকা আদায়ই বা করবেন কীভাবে? বিস্তারিত আলোচনা করলেন ম্যাক্সলাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের এগজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (আন্ডাররাইটিং ক্লেমস অ্যান্ড রিইনসিওরেন্স অ‌্যাডমিন), ড. পোরাস পেশোটন। রইল তাঁর বক্তব্য।

Advertisement

ব্যক্তি হোক কিংবা ব্যবসা–সবার জীবনকালেই থাকে আগাম অনুমান করা যায় না এমন ঝুঁকি। সেই ঝুঁকি থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিমা। বিমাই হল আর্থিক নিরাপত্তার ভিত। জীবনের অনিশ্চয়তাকে সামাল দিতে বিমা কাজ করে নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা-বেষ্টনীর মতো। এবং বিমা এমনভাবে নিরাপত্তা দেয় যা অন্য কোনও আর্থিক সংস্থা দিতে পারে না। তবে, বিমার যাত্রাপথে সবচেয়ে কেন্দ্রীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ‘সত্যের মুহুর্ত’টা আসে তখনই যখন পলিসির মালিক বিমার টাকার দাবি পেশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তেই বিমার প্রকৃত মূল্যটা বোঝা যায়। কারণ তখনই কোনও বিমার পলিসির কার্যকারিতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার আসল পরীক্ষা হয়। উন্নত প্রযুক্তি এবং ডিজিটাইজেশন এখন বিমার ভ্যালুচেনের প্রতিটি কোণায় কোণায় সক্রিয়। ফলে বিমাশিল্প এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে এমন এক জায়গায় যেখানে পলিসিহোল্ডারদের দাবি সংক্রান্ত যে সব অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানি, তার বদলে এক নতুন সংজ্ঞা যোগ করার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শিল্প।

প্রযুক্তির উন্নতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে
পলিসি হোল্ডারদের বিমার দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রযুক্তি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে, বিমা সংস্থাগুলো পলিসি হোল্ডারদের দাবি মেটানোর কাজে একেবারে বিপ্লব আনতে চলেছে। আধুনিক যুগের গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুততর করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক অটোমেশন ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর ফলে, বিমা সংস্থাগুলো পলিসিহোল্ডারদের বিমার দাবি মেটানোর যে প্রক্রিয়া, তার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমকে কাজে লাগিয়ে বিমা সংস্থাগুলো হাতেকলমের কাজকে স্বয়ংক্রিয় কাজে পরিণত করতে পারে। 

এর দরুণ কর্মীদের হস্তক্ষেপ কমে আসে এবং দেরিও বিশেষ হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের দরুণ বিমার দাবি বিবেচনা করার কাজ একেবারে নিখুঁত করে তোলার বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করা যাবে। ফলে যেগুলি প্রকৃতই সত্যিকারের দাবি, সেগুলি দ্রুত মিটিয়ে ফেলার কাজটা নিশ্চিত করা যাবে। বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই পদ্ধতিগুলো নানা ধরনের অ্যানালাইটিক্যাল মডেল কাজে লাগায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রেখে বিমার যে সব জাল ও ভ্রান্ত দাবি পেশ করা হয়, সেগুলোও আটকানো যাবে। বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ডিজিটাইজড মাধ্যমের সাহায্যে আজকের দিনে এবং এখনকার যুগে জাল ও ভ্রান্ত দাবি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে বিমা সংস্থাগুলো।

সেল্ফ সার্ভিসের সুযোগে দেওয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের ক্ষমতায়ণ

পলিসি হোল্ডারদের বিমার দাবি মেটানোর প্রক্রিয়ায় সেলফ-সার্ভিসের সুযোগকে যুক্ত করে বিমা সংস্থাগুলি গ্রাহকদের সস্তুষ্টি এবং কোম্পানির সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। এই পরিষেবার মধ্যে পড়বে অনলাইন পোর্টাল এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যা ব্যবহার করা খুবই সহজ। এগুলোর মাধ্যমে বিমার সুবিধাভোগীরা তাঁদের দাবি পেশ করতে পারবেন, সেই দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে কাজ কতটা এগোল তা দেখতে পারবেন, এবং এই বিষয় সংক্রান্ত কোনও তথ্য আপডেট করার সঙ্গে সঙ্গে তা জানতে পারবেন। নিজে থেকেই বুঝে নিতে পারে এমন ইন্টারফেসের সাহায্যে বিমা সংস্থাগুলি গ্রাহকদের দিতে পারে প্রয়োজনমাফিক সহযোগিতা, ফলে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা হয় স্বচ্ছন্দ এবং নির্ঝঞ্ঝাট।

অতি-তৎপর যোগাযোগ এবং জোরদার গ্রাহক পরিষেবা

বিমার দাবি মেটানোর প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট এবং সময়োচিত যোগাযোগ যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা স্বীকার করে নিয়ে শীর্ষস্থানীয় বিমা সংস্থাগুলো অতি-তৎপর যোগাযোগের কৌশল কাজে লাগাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনকে কাজে লাগিয়ে তারা পলিসিহোল্ডারদের একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছে এবং কী করণীয় তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটা করা হচ্ছে, বিমার দাবি আদায় প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে। গ্রাহকদের প্রশ্ন এবং আগ্রহের বিষয়গুলোর দ্রুত উত্তর দিতে বিমা সংস্থাগুলি জোরদার গ্রাহক পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ক্রমাগত আরও বেশি করে বিনিয়োগ করছে। এগুলোর মধ্যে পড়ে ডেডিকেটেড হেল্পলাইন, লাইভ চ্যাট, এবং ২৪/৭ সহযোগিতা। এর ফলে গ্রাহকদের সর্বশেষ তথ্য জানা থাকে এবং তাঁরা এটা জানতে পেরে নিশ্চিত হন যে, তাঁদের দাবি মেটানোর জন্য তৎপরতা জারি রয়েছে।

নির্ঝঞ্ঝাট এবং সংযুক্ত ইকোসিস্টেম

আজকের দিনে বিমা সংস্থাগুলো বহু ধরনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলেছে। এদের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয় এমন সংস্থা। এর ফলে গড়ে ওঠে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত একটা ইকোসিস্টেম, যা পরিষেবা দেয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ সহযোগিতার ব্যবস্থা করা থেকে বিমার দাবি আদায়ের সুসংহত প্রক্রিয়া–এই ধরনের বাস্তুতন্ত্রগুলো সংশ্লিষ্ট তথ্য ও জ্ঞান গ্রাহকের সঙ্গে শেয়ার করার বিষয়টিকেও কাজে লাগায় এবং তার ফলে দাবি আদায়ের ব্যাপারটা হয়ে ওঠে সুসমন্বিত ও দক্ষতাপূর্ণ।

দক্ষতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রয়োজনমাফিক সাহায্য: ভারসাম্যের নয়া পন্থা প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে দক্ষতা বাড়ায় এবং বিমার দাবি আদায়ের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। তবে যেহেতু দাবি পেশ করা এবং তা মেটানোর বিষয়টি বেশ জটিল, তাই এক্ষেত্রে মানবিক হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। তাতে সঙ্কটকালে সহানুভূতির সঙ্গে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়। ভবিষ্যতের কথা ভাবে এমন বিমা সংস্থাগুলো তাদের একেবারে সামনের সারিতে থাকা এজেন্টদের এবং অপারেশন টিমগুলোর ক্ষমতায়ণ করছে যাতে বিমার দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে তারা গ্রাহকদের একটি সামগ্রিক অভিজ্ঞতা দিতে পারে।

সব কিছুর কেন্দ্রে গ্রাহক, এই মূল্যবোধ জোরালো করা

বিমার দাবি মেটানোর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রযুক্তির সম্ভাব্য ক্ষমতাকে বিমা সংস্থাগুলো কতদূর কাজে লাগাতে পারছে তার ওপর। একইসঙ্গে চালিকাশক্তি হিসাবে থাকতে হবে বিশ্বাস ও স্বচ্ছতার নীতি। যদি লক্ষ্য হয় খুব দ্রুত এবং সহজে বিমাকারীর দাবি মেটানো, তাহলে অবশ্যই বিমা সংস্থাগুলিকে গ্রাহক-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যে সব বিমা সংস্থা অত্যন্ত সক্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে তারা এটা মানে যে, গ্রাহককে দ্রুত এবং নির্ঝঞ্ঝাট পরিষেবা দেওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তারা এটাও মানে যে, গ্রাহকদের সামগ্রিকভাবে শ্রেষ্ঠতর একটা অভিজ্ঞতা দেওয়ার কাজটাও খুবই দরকারি। সমস্ত কাজকর্মের কেন্দ্রে গ্রাহকদের স্থান দিয়ে বিমা সংস্থাগুলো গড়ে তুলতে পারে দীর্ঘকালীন আস্থা, বাড়াতে পারে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি এবং উন্নত করতে পারে নেট প্রোমোটার স্কোর (এনপিএস)।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement