অভিষেক চৌধুরী,কালনা: তিনি দেবতার মতোই আরাধ্য। ঈশ্বরের আসনে বসানো হয়েছে দেশনায়ককে। হ্যাঁ, এভাবেই জন্মবার্ষিকীতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় পূর্বস্থলীর রায় পরিবারে। শুধু তাই নয়, নেতাজির ‘পুজো’য় ভোগ হিসেবে সিঙারা দেওয়ার রীতিও প্রচলিত রয়েছে।
নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে কালনা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় থাকা নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত স্থানে তাঁকে প্রতিবার শ্রদ্ধা জানানো হয়। এবারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কালনার (Kalna) জ্ঞানানন্দ মঠে এদিন তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। কিন্তু এদিন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে পূর্বস্থলীর রায় পরিবার। নেতাজি এখানে পূজিত হন কুলদেবতা রূপেই। তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।
[আরও পড়ুন: অনুষ্ঠান করা নিয়ে নিত্য অশান্তি, বাঁকুড়ার মহিলা বাউলশিল্পীকে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে]
ব্রিটিশ শাসনকালে সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) কালনার জ্ঞানানন্দ মঠ ও পূর্বস্থলীর রায় পরিবারে এসেছিলেন। এখনও ওই দুই জায়গায় নেতাজির ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। জ্ঞানানন্দ মঠে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা মহারাজ নিত্য প্রেমানন্দ অবধূত জানান, “১৯৩০ সালে নেতাজি এই আশ্রমে এসেছিলেন মঠের প্রতিষ্ঠাতা নিত্য গৌরবানন্দ অবধূতের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি এখানে দু’রাত্রি ছিলেন। রাতে রুটি ও দিনে ভাত খেয়েছিলেন। মধ্যরাতে এসে মধ্যরাতেই ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার দু-একমাস পরেই নিত্য গৌরবানন্দ অবধূতকে গ্রেপ্তার করেছিল ব্রিটিশ পুলিশ। তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে সাত বছর জেলও খেটেছিলেন।”
নেতাজির ব্যবহৃত শয়নের চৌকি, খাবার টেবিল, বসার চেয়ার আজও সংরক্ষিত রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই আসবাবগুলি তাঁরা পুজোও করে থাকেন। এদিন তাঁর প্রতিকৃতি-সহ তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্রে মাল্যদান করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত স্থান এই মঠ। এই কারণে মঠের সামনে ‘নেতাজি সুভাষ তোরণ’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘নেতাজির স্বপ্নের স্বাধীন ভারত এখনও গড়ে ওঠেনি, আমরাই গড়ব’, মূর্তি উন্মোচনে শপথ মোদির]
অন্যদিকে পূর্বস্থলীর রায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামী রমেশচন্দ্র রায় ও তাঁর ভাই সুরেশচন্দ্র রায়ের পরিবারেও নেতাজি এসেছিলেন ১৯৩২ সালে। তৎকালীন সময়ে রমেশবাবুর স্ত্রী শিবভাবিনী দেবী জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন। পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালি থেকে মেড়তলায় যাওয়ার আগে নেতাজি রায়বাড়িতে যে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, তা আজও ওই বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে। এও জানা যায়, শিবভাবিনী দেবী নিজের হাতে সিঙারা তৈরি করে সুভাষবাবুকে খাইয়েছিলেন। সেই কারণে আজও নেতাজির জন্মদিনে সেই চেয়ারে প্রতিকৃতি রেখে সিঙারা ভোগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। শুধু তাই নয়, নেতাজিকে কুলদেবতার চোখেও দেখেন বলেই জানান পরিবারের সদস্য তপন রায়,গৌতম রায় ও বিকাশ রায়রা।