সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিন তালাক নিয়ে এখন দেশ জুড়ে বিস্তর হইচই। কয়েক মাস আগে মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত এই প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার মুসলিম সংগঠনগুলির তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভায় ধ্বনি ভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে তিন তালাক। এখন রাজ্যসভায় অনুমোদন পেলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। বিলে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে অভিযুক্তকে তিন বছর কারাদণ্ডের সাজা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ বিস্মৃতি অতলে তলিয়ে গিয়েছেন হামিদ দালওয়াই। কিন্তু, ঘটনা হল, এদেশে তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনে তিনি-ই শুরু করেছিলেন।
[ঐতিহাসিক মুহূর্ত, ভোটাভুটি শেষে লোকসভায় পাশ তিন তালাক বিল]
মুসলিম সমাজে তালাক শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করে স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক বিবাহবিচ্ছেদ দেওয়ার রীতি বহুদিনের। এই রীতি বা প্রথাই তিন তালাক নামে পরিচিত। কিন্তু, মুসলিম মহিলাদেরই একাংশের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতে মামলাকারীদের পাশে থাকাই শুধু নয়, লোকসভায় তিন তালাক বিলও পাশ করিয়েছে ফেলেছে মোদি সরকার। বস্তুত, তিন তালাক রোধের যাবতীয় কৃতিত্ব যে মোদিরই, তা প্রমাণ করতে চেষ্টার কসুর করছে বিজেপি। আর এসবের মধ্যেই কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন হামিদ দালওয়াই!
[তিন তালাক বিল পাশে দেশ জুড়ে সেলিব্রেশনে মুসলিম মহিলারা]
কিন্তু, কে এই হামিদ দালওয়াই? এককথায়, স্বাধীন ভারতে মুসলিমদের তিন তালাক ও বহুবিবাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের জনক। ১৯৩২ সালে সেপ্টেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন হামিদ। খুব অল্প বয়সেই রামমনোহর লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো সমাজবাদী নেতাদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। শুরু হয় মুসলিম সমাজে সংস্কারের দাবিতে লেখালেখি। কিন্তু, অচিরে হামিদ দালওয়াই বুঝতে পারেন, শুধুমাত্র লিখে মুসলিম সমাজে বদল আনা সম্ভব নয়। ১৯৬৮ সালে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার সোসাইটি নামে একটি সংগঠন তৈরি করে তিন তালাক ও বহু বিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এই মুসলিম বুদ্ধিজীবী। ১৯৭০ সালে তৈরি করেন মুসলিম সত্যসাধন মণ্ডল। এদেশে যখন হামিদের নেতৃত্বে তিন তালাক বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন প্রধান রাজনৈতিক দল বলতে ছিল কংগ্রেস। বিজেপির তো প্রশ্নই নেই, দলের আদি সংগঠন সংঘও তখনও কালের গর্ভে। কিন্তু, হামিদ দালওয়াইয়ের পাশে দাঁড়াননি তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা। বস্তুত, সমাজের সর্বস্তরে তাঁকে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়। হামিদ ও তাঁর স্ত্রীকে কার্যত একঘরে করে দিয়েছিল মুসলিম সমাজও। মুসলিম সত্যসাধন মণ্ডলের বর্তমান সভাপতি শামসুদ্দিন তাম্বুলি জানিয়েছেন, বহুবিবাহ প্রথা রোধ ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর দাবিতে মহারাষ্ট্রের তখনকার মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন মুসলিম মহিলারা। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও স্মারকলিপির কপি পাঠানো হয়েছিল। এসবই সম্ভব হয়েছিল হামিদ দালওয়াইয়ের জন্য। কিন্তু, তিন তালাক নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক তরজার মাঝে সেকথা আর কেউ-ই মনে রাখেনি।
[প্রশ্নপত্রে তিন তালাক-নিকাহ হালালা, রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপানোর অভিযোগ পড়ুয়াদের]
The post জানেন, মুসলিমদের তিন তালাক বিলোপের দাবি প্রথম কে তুলেছিলেন? appeared first on Sangbad Pratidin.