টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: মুকুটমণিপুরে গিয়েছেন। বাঁকুড়ার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রও আপনার ঘোরা। আজকের টোটোয় থাকছে রূপসী বাংলার অন্য এক বেড়ানোর স্পট। যেখানে প্রকৃতিই সব।
[ডাল লেকের ধাঁচে হাউসবোটে রাত কাটানোর সুযোগ পূর্বস্থলীর চাঁদের বিলে]
স্বচ্ছ নীল জল আর তার সঙ্গে ঘন সবুজের হাতছানি। এই নিয়ে বাঁকুড়ায় পর্যটনের নতুন ডেস্টিনেশন সবুজদ্বীপ। উজ্বল তটভূমি ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ। যে দ্বীপে পরিযায়ী পাখিরা আপন খেয়ালে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায়। এক সময় রাতের অন্ধকার তো বটেই দিনের বেলাতেও রাইপুর, রানিবাঁধ ব্লকের মাঝে এই এলাকা পা ফেলতে ভয় পাতেন সাধারণ মানুষ। এখানে ডেরা বেঁধে ছিল মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি। তখন ওই এলাকার বাসিন্দারা কেউ তাকে চিনতেন মুরলী নামে কারও কাছে তার পরিচয় ছিল শ্রীধর নামে। হরদম মুখে গামছা ঢাকা পিঠে একে-৪৭ নিয়ে গ্রামের মেঠো আলপথে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এখন সে সব দিন অতীত।
[পাহাড়ে একঘেয়েমি? অন্য স্বাদের খোঁজ পেতে চলুন সিটং]
এই এলাকার মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। নদীর বয়ে চলা জলরাশির কুলকুল শব্দ আর বুনোফুলের গন্ধে আপনি বুঁদ হবেনই। একথা হলপ করে বলা যায়। এখানেই কংসাবতী দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে আবার ওই নদী ফের মিলে গিয়েছে। নদীর গতিপথে তৈরি হওয়া ছোট দ্বীপ সবুজ ঘাসে ঢাকা। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে নানা বুনো গাছ-গাছড়া। আর তার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলেই দেখতে পাবেন কংসাবতীর জলে ডুব দিয়েছে পানকৌড়ি। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা গাছের ডালে বসে ছুঁচালো ঠোঁট নিয়ে জলের দিকে তাক করে বসে আছে রঙবাহারি মাছরাঙা। কংসাবতীর স্বচ্ছ জলে একটু স্থির চোখে তাকালেই দেখতে পাবেন নানান জলজ প্রাণী, মাছ, কাঁকড়া , শামুখ। আছে পাথুরে তেতুল বিছে। আপনার নজরদারি বুঝতে পারলে সে নিমেষে সুড়ুৎকরে সিধিয়ে যাবে পাথরের খাঁজে। এ সব থেকে সাবধান থাকাই ভাল। কারণ এখানে কোনও কিছুই কৃত্তিম নয়, সবকিছুই বন্য। এই ছোট সবুজ দ্বীপের আশে পাশে জনসংখ্যা খুবই কম । যদি আপনার বিষয় অ্যানথ্রোপলজি হয় তবে এই এলাকার বাসিন্দাদের দৈহিক গড়ন মুখাবয়ব দেখে আর্য-অনার্যের ইতিহাস ঘুরপাক খেতেই পারে আপনার মস্তিষ্কে। নীল স্বচ্ছ জলরাশি নিয়ে সারা বছর বয়ে চলা কংসাবতীর জলে ঘুরে বেড়ানোর সময় গাছের পাতা নড়া, ঝরে পড়া পাতার মচমচ শব্দ,হু হু হাওয়া। প্রকৃতি যেন কথা বলে।
[হাত বাড়লেই সবুজের রাজ্য, মন ভাল করার রসদ জঙ্গলমহলে]
কীভাবে যাবেন?
সবুজ দ্বীপে যাওয়ার দুদিক দিয়েই রাস্তা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গনগনি ময়ূর ঝরনা ঘুরে বাস ধরে চলে আসতে পারেন। নতুবা দক্ষিন পূর্ব রেলে চেপে মন্দিরনগরী বিষ্ণপুরে নেমে বাসপথে তালডাংরা হয়ে জঙ্গল চিরে সড়কপথে রাইপুর।
থাকার কী ব্যবস্থা?
এখনও থাকার তেমন সুব্যবস্থা না গড়ে উঠলেও কাছে পিঠেই রয়েছে মুকুটমণিপুর, ঝিলিমিলির মতো পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র। তবে স্থানীয় প্রশাসন গুটিকয়েক সরকারি গেস্টহাউস তৈরি করেছে এই এলাকায়।
The post কংসাবতীর রূপে উজ্জ্বল ‘সবুজদ্বীপ’, রূপসী বাংলায় নতুন বেড়ানোর স্পট appeared first on Sangbad Pratidin.